২শ’ কোটি টাকার মধু উৎপাদিত হবে সরিষার ফুলে

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর(নাটোর)
০১ জানুয়ারী ২০২৪

গুরুদাসপুরসহ চলনবিলের বিস্তৃর্ন আবাদি মাঠের রঙ এখন হলদে, সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। মাঠে আবাদ হওয়া এ সরিষা স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের ভোজ্যতেলের যোগান দেবে। তবে তার আগেই সরিষা ফুল থেকে কম খরচে উৎপাদিত হবে ২শ’ কোটি টাকার মধু।

উপজেলা কৃষি বিভাগের হিসাবে, গুরুদাসপুরে এবার হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। সরিষা মাঠ সংলগ্ন ৩৫০ হেক্টর জমির পাশে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে এ মধু। ৬৮০টি মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌয়ালরা। মৌসুম শেষে এসব বাক্স থেকে উৎপাদিত মধুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩৭৫ মে.টন। এখন প্রতিকেজি মধুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। সে হিসাবে ২শ কোটি টাকার উপরে মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে গুরুদাসপুর উপজেলার রুহাই মাঠে দেখা গেছে, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে বসছে। এরপর ফুল থেকে ফিরছে বিশেষভাবে তৈরি কাঠের বাক্সে। সেখান থেকে আবার ফুলে ফুলে ঘুরছে। নির্দিষ্ট সময় পর মৌয়ালরা বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। সেই মধু বাজারজাত করা হচ্ছে।

মৌয়ালরা জানান, বাক্সে বিশেষ কৌশলে রানী মৌমাছিকে আটকে রাখা হয়। ফলে শ্রমিক মাছিগুলো রানীকে অনুসরণ করে বক্সে সমবেত হয়। প্রতিটি মৌবক্সে সাত থেকে ১০টি কাঠের ফ্রেমের সঙ্গে মাছি মধু সঞ্চয় করে। পরে মৌবাক্স বের করে মেশিনের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে ঘুরিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। তারা জানান, রোদ কিংবা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বাক্সের ওপরের অংশ কালো রঙের পলিথিন পাটের চট দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হয়। মৌমাছির অবাধ চলাচলের জন্য ছিদ্রপথ রাখা হয়।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মোল্লা বাজারের মৌচাষি দিগন্ত মন্ডল জানান, তার ১শটি মৌবাক্স  রয়েছে সরিষা মাঠে। এ থেকে সপ্তাহে ৩০০-৩২০ কেজি মধু উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিকেজি মধুর বর্তমান বাজার দর ৩০০-৩৫০ টাকা। সে হিসাবে দৈনিক ১৫ হাজার আয় হচ্ছে তার।  

দিগন্ত মন্ডল আরো জানান, মৌসুম ভিত্তিক সরিষা,লিচু, বড়ই, কালো জিরা,ধনিয়া ফুল থেকে বছরে মাস মধু সংগ্রহ করা হয়। বাকি ৬ মাস মৌমাছিগুলোকে চিনি মিশ্রিত তরল খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। সেক্ষত্রে চিনি, শ্রমিকের মুজুরী,মৌবাক্স খরচ মিলিয়ে বছরে ব্যয় ১২ লাখ টাকা। খরচ বাদে বছরে ১৫ লাখ টাকা আয় হয় তার।

চলনবিলে উৎপাদিত মধুর স্থানীয় বাজারে, দেশীয় কোম্পানী অনলাইন বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কোম্পানী পর্যায়ে এপি, ডাবর, প্রাণ মধু সংগ্রহ করে।

নাটোর জেলা মৌচাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ মন্ডল বলেন,  এ এলাকার ৪০টি মৌ খামার রয়েছে। এতে অনেকেই বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, আবাদি সরিষা জমির পাশে মৌবক্স স্থাপনের ফলে সরিষার ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। মৌচাষে খরচ কম লাভ বেশি বলে তরুণরা ঝুঁকছেন এবং স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর