রাত পোহালেই রোববার (৭ জানুয়ারি), দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন। ভোটগ্রহণ সুস্ঠু, অবাধ ও নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে আয়োজক নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিকে ভোটে যায়নি বিএনপিসহ সমমনা ১৫ দল। তারা ভোটের আগের দিন শনিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। ভোটের দিন গণকারফিউ ঘোষণা করেছে ১২ দলীয় জোট। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অনেকদিনই লিফলেট ও গণসংযোগ চালিয়েছে বিএনপি। হরতালের আগের রাতে ঢাকায় বেনপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে মশাল মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, ভোটের দিন কোনো ধরণের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় ধরনের বিকট শব্দ সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে নাশকতাকারীরা, এ তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও প্রচার-প্রচারণা নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ একেবারেই কম হয়নি। তাছাড়া ভোট বানচাল করতে সরকার বিরোধীরা ভোটের দিন মরণ কামড় দিতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা শঙ্কা আর সংশয়ের মধ্য দিয়ে ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন সাধারণ মানুষ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে মোট এক হাজার ৯৭০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নওগাঁ-২ আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হলে বিধি অনুযায়ী আসনটির ভোট স্থগিত করেছে ইসি। ৭ জানুয়ারি (রোববার) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে এসব আসনে।
ভোটগ্রহনের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার-প্রচারণা বিধি অনুযায়ী শেষ করেছেন প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণা চলাকালে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূলত আওয়ামী লীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কারণে দ্বন্দ্বটা বেশি রয়েছে। এবারের নির্বাচনে অন্তত ২২০টি আসনে সাড়ে তিনশর বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, তফসিল ঘোষণার পর শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর ১৭ দিনে ২০০টির বেশি জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের হিসাবে, প্রতীক বরাদ্দের দিন ১৮ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনে হামলা, সংঘর্ষ, নাশকতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় ১৮৪টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ২১৫ জন।
কিছু এলাকার ভোটাররা আশঙ্কা করছেন, ভোটের এক-দুদিন পরেও সহিংসতা ঘটতে পারে। একপক্ষ পরাজিত হলে অন্য পক্ষের সমর্থকরা হামলা চালাতে পারে।
ওদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে মাঠে নামানো হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। নিযুক্ত করা হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। র্যাব-বিজিবি আছেন সঙ্গে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জানিয়েছেন, নাশকতাকারীদের সেই পরিকল্পনার তথ্য আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়েছি। এ ধরনের ভীতির সঞ্চার তারা করতে পারবে না বলেও আশা করছেন আইজিপি। তিনি আরও বলেন, পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ নাশকতা করতে পারবে না। তবে দু-এক জায়গায় চোরাগোপ্তা কিছু করতে পারে। এর আগেও সারাদেশে নাশকতার চেষ্টা হয়েছিল, তবে কোথাও সফল হতে পারেনি তারা। হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ভোট ঘিরে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বা নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে ফলাফল ভালো হবে না। যারা এসব করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে