খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলার ভয় দেখান ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠার পর থেকেই ক্যান্টিনে বাকি খাওয়া শুরু করেন মিনহাজ। এভাবে বাকির টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। বাকির টাকা চাইলে খাবারে তেলাপোকা মাছি ফেলে দেওয়ার ভয় দেখান তিনি। ফলে বাকি লেখা আর বকেয়া চাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন  ক্যান্টিন মালিক হলেন মো. আলতাফ হোসেন। এভাবে টানা ৫ বছর হচ্ছে তার কান্টিনে মাগনা খাবার খাচ্ছেন মিনহাজ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলে ঘটেছে এ ঘটনা। আর এসব তথ্য জানা গেছে ক্যান্টিন সূত্রে। মিনহাজ ইসলাম শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তিনি।

শুধু মিনহাজই নন, তার মতো  ছাত্রলীগের আরেক নেতা সোহান এ কান্টিনে তিন মাস ধরে ডাইনিং থেকে দুপুর ও রাতে দুবেলা খাবার ফ্রিতে খাচ্ছেন। সোহান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হবিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।

অবশ্য অভিযুক্ত দুই নেতাই মাগনায় খাবার খাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

ডাইনিং কর্মচারীদের অভিযোগ, এই দুই নেতার রুমে প্রতিদিন দুবেলা খাবার দিয়ে আসতে হয় তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময় ফ্রিতে খাবার দিয়ে ডাইনিং-ক্যান্টিন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। খাবারে তেলাপোকা মাছি ফেললে তারা ডাইনিং-ক্যান্টিন পরিচালনা করতে পারবেন না, এমন ভয় থেকে ফ্রিতে খাবার দিয়ে যাচেছন তাদের। তারা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হলে ওঠার পর থেকে আমার ক্যান্টিনে বাকি খাচ্ছে মিনহাজ। বাকির টাকা লিখতে লিখতে হতাশ হয়ে গেছি আমি। তাই এখন আর তার বাকির টাকা লিখি না। একবার টাকা চেয়েছিলাম। বিধায় হুমকি দিয়েছিল তেলাপোকা মাছি মেরে খাবারে দিয়ে দিবে। এরপর থেকে আর টাকা চাইনি আমি।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রভোস্টদের জানিয়েও সমাধান পাইনি। তারা শুধু বাকি দিতে মানা করেন। আমি শারীরিকভাবে হার্টের রোগী, আমার শরীরে তিনটি রিং বসানো হয়েছে। প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগে। এসব বিষয় বলার পরেও তারা কোনো কেয়ার করে না।

এদিকে অভিযুক্ত মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ক্যান্টিনে আমার এতো টাকা বাকি নেই। বাকি খাচ্ছি এবং মাঝে মাঝে টাকা পরিশোধও করছি। তিন-চারশো টাকা হয়তো বাকি থাকতে পারে। ডাইনিং থেকে কখন আমার রুমে খাবার আসে বিষয়টি আমার জানা নেই।

অভিযুক্ত সোহান আহমেদ জানান, আমার রুমে কোনো ধরনের খাবার আসে না। এসব অভিযোগ এনে ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমার সামনের ক্যারিয়ারকে নষ্ট করতে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, বিষয়টি আমি মাত্রই শুনেছি। কমিটি পাওয়ার পর থেকেই ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে ফ্রিতে খাবার বা বাকি খাওয়ার বিষয়ে আমরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করছি। বিষয়ে ডাইনিং-ক্যান্টিন মালিকদের সঙ্গে দেখাও করেছি। হবিবুর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের নামে যে অভিযোগ পেয়েছি, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসবো। বিষয়ে সত্যতা পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেবো।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক . শরীফুল ইসলাম বলেন, ডাইনিং ক্যান্টিনের কর্মচারীরা বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি তাদেরকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিতে নিষেধ করে দিয়েছি। তবুও কেন তাদেরকে তারা বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিয়ে থাকে, সেটা আমি জানি না।

বিডি২৪অনলাইন/মানিক হোসেন/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর