কানু স্যানাল, পাবনা
বকেয়া বেতন না পাওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন পাবনা সুগার মিলস লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারীরা। কবে নাগাদ তারা তাদের প্রাপ্য বুঝে পাবেন সেটাও অনিশ্চিত। ৩৪৫ কোটি টাকার বেশি লোকসানের বোঝা নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর বন্ধ হয়ে যায় এই মিল।
শিল্পমন্ত্রণালয় থেকে মিল বন্ধ সংক্রান্ত চিঠি আসার পরপরই মিলের শ্রমিক, আখ চাষী, কর্মচারীরা পাবনা দাশুরিয়া সড়কে কয়েক দফা বিক্ষোভ করেন, তারা মিলটি চালু রাখার দাবি জানান। গত কয়েক মাস তারা আশাবাদী ছিলেন- আবার হয়তো চালু হবে এই মিল।
শ্রমিকরা জানান, তারা প্রায় ১ বছর বেতন পান না। পাবনা চিনিকল ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন,আমাদের একদিকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে মিলটি পূনরায় চালু করা হবে, অন্যদিকে মিল থেকে যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বেতন ভাতা পাবো কি-না জানি না, আমরা পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছি। আমরা এখনও আশাবাদী আবার মিলটি চালু হবে।
পাবনা আখ চাষী সমিতির সদস্য বাদশা মিয়া জানান, পাবনা সুগার মিল কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর লোকসানের পর নানা অজুহাত সামনে আনেন। তবে বিশ বছরেও এই সব অজুহাত নিরসন করে মিলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কার্যত: তারা ব্যর্থ হয়েছেন। মিলের ক্যাপসিটি আছে উৎপাদনের, তাহলে লোকসান হচ্ছে কেন এইটা বুঝে আসে না।
জানা গেেেছ, ১৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পাবনা ঈশ্বরদী সুগার মিল প্রায় ১ লাখ ১৩ শ’ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করেছে সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই মিল কখনও সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারেনি। ১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের দাশুড়িয়ায় পাবনা সুগার মিলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭-৯৮ সালে মিলটি বাণিজ্যিকভাবে আখ মাড়াই শুরু করে।
পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন লোকসানের কথা স্বীকার করলেও নিরসনে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না বলে জানান। দীর্ঘ ২০ বছরেও মিলটি লাভের মুখ দেখেনি কেন- জানতে চাইলে তিনি মিলের হাতে আখ উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমান জমি নেইসহ বিভিন্ন অজুহাত তুলে ধরেন। তবে সুগার রিফাইন্ড করার পদক্ষেপসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে উল্লেখ করে তিনি জানান, লোকসান কমাতে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পাবনা সুগার মিল কর্তৃপক্ষ বলছেন, পাবনা অঞ্চলে উন্নতজাতের আখ চাষ হয় না। তবে সুগার রিসার্চ ইন্সটিটিউট এই কথা মানতে একেবারেই রাজি নয়। তারা বলছেন, গবেষণাজাত যে আখ বীজ উৎপাদিত হচ্ছে, সেটি উচ্চ ফলনশীল। দীর্ঘদিন বেতনভাতা না পাওয়া শ্রমিকরা মিলের লোকসানের কারন অনুসন্ধান করে যর্থাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং বন্ধ সুগার মিল দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এমকে