আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের ৭মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সেদিনের বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের এ ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়। মূলত বঙ্গবন্ধুর সেদিনের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের আহ্বানেই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে বাঙালি।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দা লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষ উপস্থিত ছিল। সেখানে মঞ্চে বজ্রকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এরপর ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।
সেদিনের বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বীর বাঙালি। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
এদিকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ব্যাপ্তিকাল ছিল মাত্র ১৯ মিনিট। এ স্বল্প সময়ে ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন তিনি। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকান্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।
বজ্রকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি বলে দিতে চাই- আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোন কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শেষ দু’টি বাক্যে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা’।
এদিকে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকাল ৪ টায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে আলোচনা সভা।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে