বৈশ্বিক মন্দায় দেশে রফতানির আদেশ কমছে। এদিকে সুদ হার বাড়ায় বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের উৎপাদন খরচ। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বাড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে ডলার পরিস্থিতি। ডলারের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে, আর ডলারের সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য। খরচ বাড়ায় বাড়ছে পণ্যের দাম। পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মন্দায় হ্রাস পেয়েছে নিট বিক্রির পরিমাণ। এতে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নগদ টাকার প্রবাহ কমেছে। ফলে দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। সব মিলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে শিল্পখাত।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ছে। গত ৭ মাসে আমদানি ও বাণিজ্যিক ঋণে ৪ এবং শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণে ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে সুদ। আর পৌনে দুই বছরের ব্যবধানে ২৮ থেকে ৪৮ শতাংশ বেড়েছে ডলারের দাম। এছাড়া রপ্তানিতে প্রাক-জাহাজীকরণ খাতে ঋণে ৮ শতাংশের বেশি, ইডিএফের ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি, কৃষি ঋণে ৪ শতাংশের বেশি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেলায় ঋণে ৬-৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে সুদ।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ঋণে সুদের হার বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর সুদের হার বৃদ্ধিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের খরচ বেড়েছে।
উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়। ওই সময়ে ৭ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয় রপ্তানি ঋণের সুদ । কৃষি ঋণ ও শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের সুদ ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। গত ৩০ জুন পর্যন্ত এ হারেই ঋণ পাওয়া যেত। কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে বাধ্য হয়ে গত ১ জুলাই থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে সুদহার বাজারভিত্তিক করতে ভিত্তি সুদ আরোপ করে। এর মাধ্যমে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত একটি অংশ যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। গত জুলাই থেকে এ পদ্ধতিতে সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। আর তখন থেকে বাড়ছে সুদের হার। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আইএমএফ মুদ্রানীতি ব্যবহার করার বিষয়ে চাপ দেয়। ফলে সব ধরনের সুদ হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওদিকে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমার পাশাপাশি বেড়েছে সুদহার।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে ডলারের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ও দেশের বাজারেও পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে । সুদহার বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতিতে চাপ থাকবে।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে