পঞ্চগড়ে ঘরের ভেতরে কবর খুঁড়ে ১২ বছর ধরে মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছে এক দম্পতি। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের এলাকার মানুষও আসছেন ঘটনাটি দেখতে। কী কারণে জীবিত অবস্থায় নিজের কবর খুঁড়েছেন, সেটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের উত্তর ভাটিয়া পাড়া গ্রামে। ওই দম্পতি হলেন গ্রামটির বাসিন্দা মো. ভাজন আলী (১০১) ও মোছা. অবিরন (৭৬)। পীরের নির্দেশে তারা খবর খুঁড়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছে ভাজন আলী।
মো.ভাজন আলী বলেন, যুদ্ধের দুই বছর পরে আমার বাবার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তিনি তার কবরের জায়গা নির্ধারন করে দেন। তিনি বলে গেছেন, আমার পাশে যেন তোমাদের দুজনের কবর দেওয়া হয়।
ভাজন আলী নিজে মুহাম্মদ ছাইফুদ্দীন নকশাবন্দী মুজাদ্দেদী এনায়েতপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ময়মনসিংহ শম্ভুগঞ্জি পীরের মুরিদ। তরিকার খেলাফতের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ভাজন আলী বলেন, পীর বাবা বলে গেছেন- কবর খুঁড়ে মাজার করে রাখতে। তাই বারো বছর পূর্বে স্ত্রীসহ নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছি। কবরের চারপাশে পাকা করে মাজার করা হয়েছে। পাশের ঘরে নামাজ আদায় মিলাদ মাহফিলসহ বসবাস করা হয়।
এখন ভাজন আলী নিজেকেই পীর দাবি করেন। বলেন, পঞ্চগড়ে তার সাড়ে তিনশ মুরিদ রয়েছে। ভাজন আলী আরও বলেন, মৃত্যুর পর আমার স্বজনেরা যাতে এ কবরে আমাকে দাফন করে, সে কথাও তাদের বলে যাচ্ছি সব সময়।
সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইলে মোছা.অবিরন বলেন, তাঁদের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে মারা গেছেন। সবার বিয়ে হয়েছে। তারা অন্যত্র থাকেন।
তাদের ছেলেদের একজন আব্দুল জলিল বলেন, পীরের ইচ্ছায় আমার বাবা-মা ঘরের ভিতর কবর খুঁড়ে রেখেছেন। শুনেছি দাদাও বলে গেছেন তার পাশে যেন তাদের কবর হয়।
সরকার পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো.আলমগীর হোসেন বলেন,মৃত্যুর আগে কবর খুঁড়ে রাখার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।আমিও দেখতে গিয়েছি। তবে কী কারণে কবর খুঁড়ে রেখেছেন তা জানতে পারিনি।
এ বিষয়ে মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি সঠিক নয়। মৃত্যুর পর তাঁর স্বজনেরা কবর খুঁড়ে দাফন-কাফন করবে, এটাই বাস্তব। তবে জায়গা নির্ধারণ করে দিতে পারেন।
বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে