মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ মার্চ ২০২৪

আজ ২৫ মার্চ, মহান স্বাধীনতা জাতীয় দিবস। জাতি এবার ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করছে।  ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ঢাকায় পাক বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর বাঙলার দামাল ও সুর্য সন্তানরা মুক্তিযদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দীর্ঘ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটি। দিবসটি উদযাপনে জাতীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলাদা আলাদা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

ঢাকাসহ সারাদেশে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।

দেশের সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সব ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোক সজ্জায় সজ্জিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যার অভিযানঅপারেশন সার্চলাইটশুরু করে। এদিন রাতে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পাক বাহিনী। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন, সেই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।  সে সময় বাস্তবতা নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেখানে ঘোষণাটি লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবেইহাই হয়ত আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছেন, যার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস- ওই ঘোষণার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ হয়। ঘোষণায় বলা হয়, ‘এই- হয়ত আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান-যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।

তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ঘোষণাটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বেশ কয়েকজন স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

এর আগে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করে। কিন্তু  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি।  এরপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকায় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। পরবর্তীতে ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত ও নিরীহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাহিনী  অপারেশন সার্চলাইটশুরু করে। অভিযানে নেমে রিকশাওয়ালা থেকে নিয়ে সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে তারা। তাদের বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দীর্ঘ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর কাঙ্খিত বিজয় পায় জাতি। তথ্য সহায়তা- বাসস

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর