তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে রাজশাহীর খামারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পশ্চিমের জেলা রাজশাহীতে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে জনজীবনে অস্বস্তি পৌঁছেছে চরমে। একই অবস্থা প্রাণিকুলেও। এদিকে  প্রচণ্ড গরমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে পোলট্রি খামারের মুরগি। ডিম মুরগি উৎপাদন ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রান্তিক খামারিরা, হতাশা বিরাজ করছে তাদের মাঝে।

রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, জেলায় প্রায় তিন হাজার খামার আছে। আর সরকারি হিসাবে আছে আট হাজার খামার। ক্ষতির কারণে অনেক খামারই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মুরগির মৃত্যু ঠেকানো না গেলে ব্যবসা মুখ থুবড়ে পরবে বলে আশঙ্কা করছে অ্যাসোসিয়েশন।

গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী এলাকার খামারি রোকনুজ্জামানের খামারে মুরগি আছে প্রায় এক হাজারের মতো। হিটস্ট্রোকে প্রতিদিন তার চার থেকে পাঁচটি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। আর এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ চলে গেলেও তার দু-একটি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে জেনারেটর ভাড়া করে মুরগিকে বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

খামারি বলেন, ‘মুরগিদের জন্য আলাদাভাবে বাতাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছাড়া গরমের কারণে মুরগির ওজন কমে যাচ্ছে। মুরগির বেড়ে ওঠা শারীরিক ওজন অনেক ধীরগতিতে হচ্ছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের আশরাফের মোড়ের খামারি নজরুল ইসলামের পাঁচটি খামার রয়েছে। পাঁচটি খামারে প্রায় ২০ হাজার সাদা লেয়ার মুরগি আছে। একটি খামারে গত এক মাসে ১২টি মুরগি মারা গেছে। গত কয়েক দিনে তার পাঁচটি খামারে প্রায় ৫০টি মুরগি মারা গেছে।

 

 

তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে মুরগিগুলো মারা যাচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে মুরগি মারা যাওয়াও কমে যাবে বলে মনে করছেন তিনি। পবার রনহাটের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার এখানে প্রায় হাজার ২০০ মুরগি আছে। গত এক মাসে প্রায় ৩০টার মতো মুরগি মারা গেছে। এসব মুরগিকে বেশি শীতল রাখা যায় না, আবার বেশি গরমেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কারণে মুরগিগুলো মারা যাচ্ছে।

দিঘির পারিলা গ্রামের গবাদিপশুর ওষুধ বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে মুরগি। গরমের কারণে হিটস্ট্রোক করছে।

রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, তীব্র দাবদাহে খামারের মুরগির ওজন কমে যাচ্ছে। মাংসের স্থিতি ৯৫ থেকে ৬০ শতাংশে  চলে এসেছে। ৪০ দিনে একটি ব্রয়লার মুরগি দুই কেজি ওজন ছাড়িয়ে যায়। এখন কেজিও হচ্ছে না।

আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে পোলট্রি খামারিদের রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো, শেডে সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, ধারণক্ষমতার মধ্যে কম মুরগি রাখা, পানিতে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার না করা, লেবু আখের গুড় দিয়ে দুপুরে শরবতের ব্যবস্থা করা, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করা, শেডের ছাদে ভেজা পাটের ব্যাগ রাখা এবং নিয়মিত পানি ঢালা, দুপুরে মুরগিকে খাবার না খাওয়ানো।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা . জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, প্রতিটি উপজেলায় আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত খামারগুলো পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তাপমাত্রায় মুরগি বাঁচানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে, তবু চেষ্টা চলছে।

বিডি২৪অনলাইন/মানিক হোসেন/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর