এশিয়ার ফুসফুস বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন অক্সিজেন ও কার্বনের এক বিশাল ভাণ্ডার। কিন্তু দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সুন্দরবন আজও গুরুত্বহীন। কিছু কুচক্রী মহলের অতি লোভের কারণে বিভিন্নভাবে ধ্বংস হচ্ছে এ বন। আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, বাঘ নিধন এবং হরিণ শিকারের মধ্য দিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে এ বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অনিয়ন্ত্রিত জলযান ও পর্যটকদের অবাধ বিচরণের ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
বুধবার (২২ মে) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে। রাজধানী ঢাকায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। ‘বারবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন : কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২২ বছরে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ খ্যাত এ বনে ৩২ বার আগুন লেগেছে। এতে শতাধিক একর বনভূমি পুড়ে গেছে। কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সেখানে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সবশেষ গত ৪ মে পূর্ব সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় অগ্নিকান্ড ঘটে। এতে ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বারবার আগুন লেগে সুন্দরবনের প্রাণীকূলের আবাস ও প্রজননস্থল যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমন-ই বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। খাদ্যচক্রে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। চরম আঘাত আসছে বনের বাস্তুতন্ত্রেও। বারবার আগুন লাগলেও সেটা নেভানোর সক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বারবার কেন সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটছে? এ আগুন কি প্রাকৃতিক, নাকি মানবসৃষ্ট?
সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিতদের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, তারা কি সুন্দরবন আদৌ নিরাপদ রাখতে পারছেন। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে অবাধে চোরা শিকারিসহ মানুষের যাতায়াত রয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এ বনে বারবার আগুন লাগানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাষ্ট্রের সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক সমন্বয় না হলে বন-পরিবেশ কোনোটাই নিরাপদ থাকে না। পরিবেশবাদীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে প্রকল্প গ্রহণের কুফল বিভিন্নভাবে পড়ছে এ বনের ওপর। এ বনকে রক্ষার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বন রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খান, বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বায়ুমণ্ডলী দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে