বেশ কয়েক মাস ধরে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে রিজার্ভে। এর মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচেও নেমেছে রিজার্ভ। তাছাড়া রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্স আয়ও কমছে, বাড়ছে। এ অবস্থায় সামনে এসেছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বিষয়টি। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ মনে করছেন, দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতই এখন সংকটে রয়েছে।
সোমবার (১০ জুন) ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতেই বিদ্যমান সংকটের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় নেই। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। আগেও সংকট ছিল, তবে সেটা তখন প্রকাশ পায়নি। তিনি বলেন, এখন রিজার্ভ সংকট, সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দা। তাই এগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। আগে নেতিবাচক দিকগুলো সামাল দেওয়া গেলেও এখন সামাল দেওয়া কঠিন বলে জানান তিনি।
দেশের ব্যাংক খাত বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে বলে জানান ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকারী এ খাত এখন অরক্ষিত। কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে, আবার টাকা জমাও হয়। সে টাকা রাতারাতি উধাও হয়ে যায়।
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি একটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে বলে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ অর্থ উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতির মধ্যেই জাতীয় বাজেট দেওয়া হয়েছে। একদিকে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর খেলাপির পাল্লা ভারী হচ্ছে। বাড়ছে দুর্নীতি, অর্থপাচার আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ । এর সঙ্গে রয়েছে আইএমএফের চাপ আর নানা ভর্তুকির বোঝা।
সংকট আরও ঘণীভূত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এ অর্থনীতিবিদ। জানান, এখন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর আরও চাপ বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপানো আর ঋণ নেওয়া- বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। ব্যাংক খাতের সংকট আরও ঘনীভূত করছে খেলাপি ঋণ। এতে নতুন ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে ব্যাংকগুলো। আর ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণই পাবে না।
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ জানান, সরকারি ব্যয়ের অপচয় রোধ করা যায়নি। ব্যাপক অপচয় হচ্ছে, আস্থা তৈরি হয়নি এখানে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাতে পারা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
সংকট মোকাবিলায় নতুন করে কোনো মেগা প্রজেক্ট না নেওয়ার পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ। বলেন, যে প্রকল্প চলছে বা আসছে তার ভবিষ্যতও দেখতে হবে। এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে কী সুফল আসবে, সেটাও দেখার বিষয়। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে খরচ কমাতে হবে। কালো টাকা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করার সুযোগে ক্রমেই ‘স্মার্ট নৈতিকতাহীন’ হয়ে পড়বে মানুষ। স্মার্ট মানুষ নৈতিকতাহীন হলে সেটা ভয়ংকর হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
বিডি২৪অনলাইন/ই/এমকে