আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ বাজেট নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ প্রস্তাবিত বাজেটে নেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একটা অংশ। তাদের মতে, এ বাজেটে ভালো প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সে জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রয়োজন ছিল।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাজেট নিয়ে আলোচনা সভারর আয়োজন করেছিল গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)। সেখানেই বিষয়টি জানান অর্থনীতিবিদরা।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৭৩। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু টাকার অবমূল্যায়নের সম্ভাবনা, অব্যাহত আমদানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়া ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এটা বড় চ্যালেঞ্জিং।
সভায় প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ৬ দশমিক ৫, সেখানে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন কীভাবে সম্ভব। এছাড়া বৈদেশিক আয় ঘাটতির কারণে পণ্য আমদানিও সহজ হবে না। সুদের হার বৃদ্ধিতে বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা কঠিন হবে।
সভায় জানানো হয়, মূল্যস্ফীতি কমাতে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার বিক্রি কার্যক্রম শ্রমিক এলাকাতে আরও বেগবান করতে হবে, যারা ন্যূনতম বেতন পায়। নিত্যপণ্যে শূন্য ট্যারিফ ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দরকার। মোদ্দা কথা নিত্যপণ্যে আরও নমনীয় হতে হবে। আর নিত্যপণ্যের দাম এত কেন বাড়ে, সেটার সদুত্তর পাওয়া দরকার। মার্কেট পলিসি না কি অন্য কোনো কারণে এটা হচ্ছে, সেটা দেখা দরকার। মূল্যস্ফীতি কমাতে অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ওপর শুল্ককর সবসময় কম থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা শূন্য হতে পারে, যাতে খাবারের দাম না বাড়ে।
বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হলেও অগ্রাধিকার খাতগুলোতে কোনো বরাদ্দ থাকছে না বলে জানানো হয় সভায়। জানোনো হয়, বছরের পর বছর বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ একই থাকছে। প্রতি বছর মূল বরাদ্দ মোটাদাগে বেতন-ভাতা দিতে চলে যাচ্ছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সেটা ব্যয় করা হচ্ছে উন্নয়ন খাতে ।
সভায় বলা হয়, ভালো বাজেট করতে হলে সরকারি ব্যয় কমানো দরকার। কোনভাবে ব্যয় কমালে একটি অশুভ অর্থনীতি আসবে না। এসব ব্যয় কীভাবে হবে, সেসব প্রোগ্রাম পরিষ্কার করতে হবে। বরাদ্দ ও ভর্তুকির মতো ব্যয়গুলো সঠিকভাবে নির্বাচিত হয় না। তাই প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় না।
সভায় বক্তব্য দেন- প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক শামস মাহমুদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ, র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম আবু ইউসুফ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বিডি২৪অনলাইন/ই/এমকে