রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা এ নিয়ে সরব হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ২৭ জেলায় এ সাপের উপস্থিতির কথা জানা গেছে। তবে সাপ নিয়ে কাজ করা প্রাণিবিদদের মতে, সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা পেলে এ সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয় না। এ জন্য হাসপাতাল তথা সবধরণের চিকিৎসা কেন্দ্রে সাপে কামড়ের ওষুধ ‘অ্যান্টিভেনম’ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা ও সতর্কতাটাই এখন বেশি জরুরি।
জানা গেছে, বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার দেশে ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’ নামে বেশ পরিচিত। ডিম না দিয়ে একসঙ্গে ২০-৮০টি পর্যন্ত জীবন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারে এ সাপ। এসব বাচ্চা বন্যার পানির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা সাধারণত খোলা জায়গা যেমন- ক্ষেত, ঝোপঝাড় এবং গ্রামীণ এলাকায় বাস করে।
রাসেলস ভাইপার সাপের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী। এটি হেমোটক্সিনের মতো কাজ করায় রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। সাপের কামড়ে সাধারণত তীব্র ব্যথা, রক্তপাত হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা না পেলে কখনও কখনও মৃত্যুও হতে পারে। তবে রাসেলস ভাইপারের চেয়েও বেশি বিষধর কেউটে সাপ।
বর্তমান নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, বনভূমি ও চরের প্রাকৃতিক প্রাণীর আবাস নষ্ট করা, গণহারে রাসেলস ভাইপার সাপের প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণী যেমন- শিয়াল, বেজি, চিল, বাজ, পেঁচা হত্যার কারণে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে রাসেলস ভাইপার সাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ধানক্ষেতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাসেলস ভাইপার পাওয়া যাচ্ছে এখন। এর কারণ প্রয়োজনীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আর আবাদি জমিতে ইঁদুরের সংখ্যা বেশি থাকে। খাদ্য হিসেবে ইঁদুরের লোভে রাসেলস ভাইপার সাপ ধানক্ষেতে অবস্থান নিচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঝিনাইদহ, রংপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, দিনাজপুর, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এ সাপের উপস্থিত দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষায় কৃষকদের গামবোট ও জিন্সের প্যান্ট পরিধান করতে হবে। রাসেলস ভাইপার সাপের মুখোমুখি হলে অধিকাংশ সময়ই প্রেশারকুকারের শব্দের মতো ‘হিস হিস’ শব্দ করে নিজের অবস্থান জানান দেয়। এ অবস্থায় নিরাপদ দূরত্ব বজার রেখে সেই স্থান ত্যাগ করলে দংশনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সাপ মারতে বা একেবারে সাপের কাছে চলে গেলে প্রতিরক্ষার জন্য সাপ কামড় দিতে পারে। আর কামড় দিলে দেরি না করে দ্রুত অ্যান্টিভেনম সমৃদ্ধ হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। যথা সময়ে চিকিৎসা নিশ্চিত না করতে পারলে অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
এদিকে রাসেলস ভাইপার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী জানান, প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মজুত আছে। সর্প দংশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। ডাক্তারের কাছে অনতিবিলম্বে নিয়ে গেলে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে