ক্যালেণ্ডারের পাতায় আজকের দিনটা মার্চের ২৬ তারিখ। বাংলাদেশিদের জন্য মহা-আনন্দের এক দিন, উচ্ছ্বসিত উল্লাসে আত্মহারা হওয়ার দিন।বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস আজ, স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ৫০ বছর (সুবর্ণজয়ন্তী) পার হচ্ছে আজ।১৯৭১ সালের এই দিনটায় শিকল ভাঙার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় মরণজয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি।
যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা দেশে উদযাপিত হবে মহান স্বাধীনতা দিবস। তবে বৈশ্বিক করোনার কারণে আয়োজনের সীমা রাখা হয়েছে সীমিত। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদ বানী দিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যুষে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। এছাড়া জাতীয়ভাবে নানা কর্মসুচি পালিত হবে দিনভর।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ তার আগে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের এক উত্তাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।
’৪৭-এর দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকদের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করে বাঙালি। মাতৃভাষার দাবিতে ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদান, সংগ্রাম-আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উন্মেষ ঘটতে থাকে বাঙালির সংগ্রামের চেতনার। ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে রায়, ’৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তির সনদ ঘোষণা, ’৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ’৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এসেছে স্বপ্নের স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। এরপরই বাংলার দামাল ছেলেরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
এমকে