সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এ মাসের শুরু থেকেই আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা ও চাকরি প্রত্যাশীরা। তাদের আন্দোলনের একমাত্র প্লাটফরম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ থেকে দাবি আদায়ে নতুন নতুন কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে কোটা সংস্কারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থার মধ্যেও এ আন্দোলন অব্যাহত রাখায় ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে বা কারও ইন্ধন রয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এটাকে ইস্যু বানিয়ে কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে, সে দিকেও দায়িত্বশীলদের রয়েছে কড়া নজর।
ওদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদির এ মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা অনেক। পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর ও কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে রোববার গণপদযাত্রা করবে তারা। পাশাপাশি এদিন রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপিও দেবেন।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইতোধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। দায়িত্বশীলদের অনেকেই মনে করছেন, এ আন্দোলনে কেউ কেউ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর বাইরে অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে চলমান আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে একটা কুচক্রী মহল ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি, বক্তব্য সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী। কোটা নিয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
ময়মনসিংহে এক সুধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শিক্ষার্থীদের একটু অপেক্ষা করা, আন্দোলন থামানো উচিত। ছাত্র ভাইদের কিছু বলার থাকলে রাস্তাঘাট বন্ধ না করে আদালতে এসে যেন বলেন তারা। রাস্তাঘাট বন্ধ করলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে, হাসপাতালগামী রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ে। আমি মনে করি, রাস্তা অবরোধ না করে প্রধান বিচারপতি যেভাবে বলেছেন, তাদের সব দাবি যেন আদালতে এসে বলেন।
ঢাকার মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালতের নির্দেশনা সবার মেনে চলা উচিত। কিন্তু কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না ফিরে বিভিন্ন সড়কে বসে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন।
তিনি জানান, কেউ যদি মনে করে আদালত বা পুলিশের কথা মানবে না, তাহলে আমাদের করার কী আছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ক্ষমতা, আমরা সেটাই করবো। আন্দোলনরতরা যদি জানমালের ক্ষতি, সড়ক অবরোধসহ মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে যৌক্তিক কাজ, সেটাই করা হবে।
তিনি আরও জানান, কেউ যদি হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে আন্দোলনের নামে, সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, ধরে নিতে পারি এসব কাজ অনুপ্রবেশকারীরাই করছে।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে