বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির অপতৎপরতা এখনও অব্যাহত আছে। তাই অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশবিরোধী সব অপতৎপরতা রুখে দিতে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অগ্রযাত্রার আজকের এই উত্তরণের পথ মোটেই মসৃন ছিল না, দেশের ভিতরে-বাইরে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে।
দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে শপথ নেওয়ার আহবান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগেও বাংলাদেশকে দারিদ্র্য আর অনুন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতো।আজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা সেই বাংলাদেশকেই দারিদ্র্য-জয় এবং উন্নয়নের আদর্শ মডেল হিসেবে তুলে ধরছেন।
তার সরকারের আমলের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫-০৬ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, বর্তমানে ২০৬৪ ডলার। দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ, বর্তমানে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশ। জিডিপি’র আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র ০.৭৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বর্তমানে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা, বর্তমান অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি। দানাদার শস্যের উৎপাদন এক কোটি ৮০ লাখ মে. টন থকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪৯০০ মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত ১২ বছরে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। লিঙ্গ সমতা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার, স্যানিটেশন, খাদ্য প্রাপ্যতা ইত্যাদি নানা সূচকে বাংলাদেশ শুধু তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশের আজকের এই অর্জন সাধারণ মানুষের। এই দেশের কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী, প্রবাসী ভাইবোনেরা, উদ্যোক্তাগণ—তাঁদের শ্রম, মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দারিদ্র্য নিরাময়ের অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। তার সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। দেশের মানুষ প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যেকোনও অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।
এমকে