উদ্ভাবনী চিন্তায় সফল ফেরিওয়ালা রাজু এখন উদ্যোক্তা

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর (নাটোর)
১৭ জুলাই ২০২৪

 

দিন আগেও বাড়ির পাশে মহাসড়কে বাসের যাত্রীদের কাছে বাদাম বিক্রি করতেন রাজু (২৭)  কাঁচা বাদাম কিনে সেটা ভেজে ভোক্তার কাছে ফেরি করে পৌঁছাতেন তিনি। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে কড়াইয়ে বালু দিয়ে বাদাম ভাজা তার কাছে কষ্টকর, ব্যয়বহুল সময় সাপেক্ষ মনে হতো সব সময়। হঠাৎ একদিন রাস্তার পাশে মিক্সার যন্ত্রে সিমেন্ট, খোয়া বালু মিশ্রণ করা দেখে সেই যন্ত্রের আদলে বাদামভাজা যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে তার।

এরপরই সেই পরিকল্পনা নিজেই বাস্তবায়ন করেন তিনি। নিজের উদ্ভাবিত বাদামভাজা যন্ত্রে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে রাজুর। তিনি এখন এলাকায় সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। রাজু নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দার কাছিকাটা গ্রামের মৃত রবিউল করিমের ছেলে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পাশে তৈরি ঘরে ভাজা বাদাম থেকে বালু ঝড়াচ্ছেন রাজু। কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন শ্রমিক সজিব। পাশে ফিট দৈর্ঘ্যের গোলাকৃতি লোহার তাওয়ার মধ্যে বাদাম বালুর মিশ্রণ একটি বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে ঘুরানো হচ্ছে। তার নিচে কাঠ-খড়ির জ্বালানি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাপ। ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে কাঁচা বাদাম ভাজা হয়ে যাচ্ছে। এরপর   তাওয়া থেকে নামিয়ে বালু পৃথক করা হচ্ছে। এরপর বিক্রি উপযোগী ভাজাবাদাম স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।

দুই সন্তানের জনক রাজু জানান,   যন্ত্র তৈরি করতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। যন্ত্রের সাহায্যে ২০ মিনিটে ৫০ থেকে ৬০ কেজি  বাদাম ভাজা যায়। দৈনিক প্রায় ৩শ কেজি ভাজা বাদাম তিনি নিজ উপজেলা ছাড়াও আশেপাশের বড়াইগ্রাম,তাড়াশ,চাটমোহর,উল্লাপাড়ায় পাইকারি বিক্রি করেন। কাঁচাবাদাম নাটোরের লালপুর, নওগাঁর আত্রাই, পাবনার বেড়া থেকে সংগ্রহ করেন বলে জানান তিনি।

এক কেজি ভাজা বাদাম বিক্রি করে লাভ থাকে থেকে ১০ টাকা। এতে তার মাসিক আয় ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। শ্রমিক,বিদ্যুৎবিল, জ্বালানি খরচ বাদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক নিট আয় বলে জানান ওই তরুন উদ্যোক্তা।

তিনি আরো জানান, ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু ছোট থেকেই উপার্জনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এক যন্ত্র তার সংসারের অভাব ঘুচিয়ে সচ্ছলতা ফিরিয়েছে।

তার সঙ্গে কাজ করা শ্রমিক সজিব জানান, তিনি এখানে দৈনিক ৫০০ টাকা হাজিরায় মাস ধরে কাজ করছেন। টাকায় তার সংসারেও স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল হোসেন জানান, এমন যন্ত্র এর আগে কোথাও তিনি দেখেননি। প্রতিদিন অনেক বেকার যুবক রাজুর উদ্বাবিত বাদাম ভাজা যন্ত্র দেখতে আসে। এলাকার একজন নিরক্ষর উদ্যোক্তার এমন আবিস্কারে তিনি গর্বিত।

মশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী জানান, রাজু একজন কর্মঠ মানুষ। তিনি এখন বেকার যুবকদের অনুকরনীয়। বেকার যুবকদের চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হবার পরামর্শ দেন।

বিডি২৪অনলাইন/সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ/সি/এমকে

 

 


মন্তব্য
জেলার খবর