২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের চাপ বাড়ছে। গত ১২টি অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৮২৭ কোটি ১১ লাখ ডলার। এর মধ্যে আবার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ডলার ব্যয় হয়েছে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে। এ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধে ৩৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার ব্যয় করেছে সরকার। যদিও গত অর্থবছরে নতুন ঋণের ছাড় এবং প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে বিদেশি ঋণ পরিশোর চাপও বাড়ছে। নতুন বিদেশি ঋণের বেশিরভাগই আগের ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। আর বৈদেশিক ঋণের অর্থ যথাযথভাবে প্রকল্পগুলোতে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ভবিষ্যতে এ চাপ আরও বাড়তে পারে।

অর্থনীতিদের পরামর্শ হচ্ছে- এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ জন্য রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। না হলে এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন তারা।

বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত  চিত্র রোববার (২৮ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে  সুদ পরিশোধে ১৩৪ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং ঋণের আসল পরিশোধে ২০০ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার খরচ হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে ৯৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার সুদ পরিশোধ করা হয়েছে।

গত অর্থবছরে নতুন ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ১ হাজার ৭২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।  এর আগের অর্থবছরে পাওয়া গিয়েছিল ৮৭৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৯৮৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। তার আগেরবার এর পরিমাণ ছিল ৯২১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।

তথ্যানুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয় ১১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এর পরের অর্থবছরে পরিশোধ করা হয় ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। তার পরের দুই অর্থবছরে কিছুটা কমলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ৭১ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০৫ কোটি ৫ লাখ ডলার খরচ হয় বিদেশি ঋণ পরিশোধে। এরপরের অর্থবছরে ১১২ কোটি ৩২ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪০ কোটি ৯১ লাখ ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৭৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০১ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি ২ লাখ ডলার  বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে।

বিডি২৪অনলাইন/ই/এমকে