বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্বক অসহযোগ আন্দোলন রোববার (৪ আগস্ট) থেকে শুরু হচ্ছে। সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও এক দফা (প্রথমে ৯ দফা ছিল) দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ আন্দোলন ডাকা হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রথমে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, প্রাণহানি, মামলা ও আটকের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ৯ দফা ঘোষণা দিয়ে সেসব দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। সবশেষ শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একদফা- সরকারের পদত্যাগ দাবি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গেল শুক্রবার সর্বাত্বক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা, হত্যার প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দেশের সব জনসাধারণকে সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক এবং কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে গণভবনে হওয়া এ বৈঠকে ‘অশুভ শক্তি’র কবল থেকে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে একতাবদ্ধ হওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
সর্বাত্মক অসহযোগে আন্দোলন প্রসঙ্গে ব্রিফ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তিনি জানিয়েছেন, এ আন্দোলন চলাকালে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, আমলাদের সচিবালয়ে, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কার্যালয়ে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
দেশবাসী সবার উদ্দেশ্যে বলা হয়- কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না; বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না; প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না; টাকা পাচার বন্ধে সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না, কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না; গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার খোলা ছাড়া অন্যান্য দিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে হোটেল-রেস্টুরেন্টও। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের আহ্বান হলো- রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধুমাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবেন; বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবেন না; বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবেন।
অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা যেমন- ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এ খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
এদিকে শনিবার বিকালে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আর এক মিনিটও এ সরকার থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রোববার (৪ আগস্ট) সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে