আন্দোলন দমাতে চরম বল প্রয়োগ করেছিল সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ অগাস্ট ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমানোর জন্য চরম বল প্রয়োগ করেছিল সরকার। এ জন্য রাবার বুলেট সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে। আন্দোলনে ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। ১২ জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত শুধু ঢাকাতে ২৮৬টি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হাজার জন নামীয়সহ এবং অন্তত সাড়ে লাখ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

রাবার বুলেট সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, প্রাণহানি ও মামলা সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের১০ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) জেনেভা থেকে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) এ প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও আন্দোলনকারীদের মুভমেন্টকে প্রতিবেদনের তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি নানা রকম প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগের গুরুতর বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘ বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবহার সহিংসতার মাত্রাকে তীব্রতর করেছে। অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষের মুঠোফোন দেখে দেখে মুছে ফেলা হয় পুলিশের সহিংসতার প্রমাণ। ১৬ জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৪০০ জন এবং আগস্ট ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিক্ষোভকারী, পথচারী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।

ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি, তাদের আইনি সুরক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের অবস্থানের তথ্যও পরিবারকে জানানো হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, এসব মামলায় আসামিদের মধ্যে অনেকেই বিরোধী দলের নেতাকর্মী। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) প্রায়ই শত শত ব্যক্তিকেঅজ্ঞাতনামাহিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেটা নির্বিচার গ্রেপ্তার কিংবা আটকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

প্রসঙ্গতি, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে প্রথমে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুরু থেকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও মাঝে এসে প্রথমে ক্ষমতাসীনদের দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগ ও পরে পুলিশ বাধা দেয়। এতে সহিংসতা যুক্ত হলে আন্দোলন বেগবান হয়।  কয়েক দফার দাবি থেকে শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি জানায় আন্দোলনকারী। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। শেষে এক দফা দাবির মুখে গত আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশে ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় আগস্ট . মূহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়।

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর