অর্থনীতিতে চার চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ অগাস্ট ২০২৪

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ . মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এরপরই ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র, ধরা পড়ছে অর্থনীতির দুর্বলতা। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই চলছে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ। এতে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে অর্থনীতির দুর্বলতা। এর মধ্যে প্রধানত চারটি খাতকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ছাত্র-জনতার সরকার।

দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য-চিত্র সমৃদ্ধ একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে একটি সুপারিশ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে। হাসিনা সরকারের ফেলে যাওয়া লরবড়ে অর্থনীতিকে সুসংহত করতে সামনে যেসব বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেটা বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছে অন্তর্র্বতী সরকার।

চালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি দুর্নীতি প্রতিরোধ। ব্যাংকিং আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর শুল্ক নীতির সংস্কার এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ।

প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি হতে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে। শ্বেতপত্রটি প্রণয়নকালে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ মতবিনিময় করা হবে।

প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে আলোকপাত করার প্রস্তাবিত বিষয়গুলো হলো-  পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানিতে বাহ্যিক ভারসাম্য, জ্বালানি এবং বিদ্যুতের চাহিদা, সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ, খরচ এবং ক্রয় চুক্তি, বেসরকারি বিনিয়োগ, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান।

শ্বেতপত্রটি প্রণয়নের প্রেক্ষাপট হিসেবে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকা ঋণের স্থিতির পরিমাণ দেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। হাসিনা সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। হাসিনা সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতি ঝুঁকেছিল। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহ ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও ছয়-সাত বছরে অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উল্টো শতাংশে নেমে এসেছে।

গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিগত সরকারের শেষ সময়ে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। হাসিনা সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র শুরুতেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন। তাই বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য-চিত্র সমৃদ্ধ একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুতের ধারণা দেওয়া হয়েছে।

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর