৪৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি, কাঁদছে সারা দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ অগাস্ট ২০২৪

উজানের ঢলের সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টি আর ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ায় আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে দেশের ১২ জেলা। চোখের পলকে দ্রুত গতিতে  পানি বাড়তে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ে এসব জেলার মানুষ। চারদিকে থৈ-থৈ পানির মধ্যে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দিন কাটাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। ৪৫ লাখ মানুষ মানবিক সংকটে পড়েছেন। বন্যার পরিধি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

বন্যাক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালীর পরিস্থিতি বেশি খারাপ।  এদিকে এসব জেলার মানুষের কষ্ট, বাঁচার আকুতি আর হাহাকার দেখে কাদছে গোটা দেশ। স্ব স্ব অবস্থা থেকে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ কর্মসূচি চলছে। শুক্রবার দ্বিতীয় দিন শেষে তাদের তহবিলে কোটি টাকার উপরে নগদ সহায়তা এসেছে। তহবিল গঠন করেছে আলেম সমাজ ও  ইসলামী দল। বন্যাকবলিত মানুষ ত্রাণের চেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন বেশি।

বন্যায় সরকারি হিসাবে  শুক্রবার পর্যন্ত নারীসহ ১৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় , ফেনীতে , চট্টগ্রামে , নোয়াখালীতে , ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় , লক্ষ্মীপুরে কক্সবাজারে জন মারা যান।

বন্যার্তদের উদ্ধারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে। কাজ করছে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ের জন্য হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।  চিকিৎসাসেবায় ৬৩৭টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ বন্যাদুর্গত মানুষ এবং ১৭ হাজার ৮৪৮টি গবাদি পশু অবস্থান নিয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নৌযান অন্যান্য উদ্ধার যান দিয়ে পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হচ্ছে।  এছাড়া  বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তি উদ্যোগের সংগঠনগুলো তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ করছে।  তবে  বৈরী আবহাওয়া পানির তীব্র স্রোতের কারণে বন্যার্তদের  নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। যথাসময়ে বন্যার্তদের উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী। গত ৪০ বছরের মধ্যে এত ভয়াবহ বন্যা দেখেনি ফেনীবাসী। শুক্রবার পর্যন্ত ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া লক্ষ্মীপুর জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলার ৬৫ উপজেলা ৪৯৫টি ইউনিয়ন পুরোপুরি পানিতে ভাসছে।

এদিকে ফেনী, কুমিল্লা চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতির হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। শুক্রবার কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে - দিনের মধ্যে  এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানির স্তর ধীরগতিতে নামছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানির স্তর স্থিতিশীল থাকলেও ২৪ ঘণ্টায় কমে যেতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা দুধকুমার নদীর পানির স্তর কমতে শুরু করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে।

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর