সংবিধান বারবার সংশোধন হয়েছে গোঁজামিলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের বর্তমান সংবিধান সংশোধন করে কোনো লাভ হবে না। কারণ, সাংবিধানিকভাবে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদেধারায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেটা সংশোধন করার সুযোগ নেই।  এর আগে বার বার গোঁজামিল দিয়েই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। তাই সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।  সে জন্য সেটা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

শনিবার রাজধানী ঢাকায় গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ- এ এমন মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে সংলাপ হয়।  আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)

সংলাপে কথা বলেন- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর সিজিএসের উপদেষ্টা . আলী রীয়াজ, আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক . বদিউল আলম মজুমদার, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অধ্যাপক . দিলারা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা)-এর সভাপতি মুনিরা খান, চাকমা সার্কেলের প্রধান আইনজীবী রাজা দেবাশীষ রায়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক . মনজুর হাসান ওবিই, সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, অধ্যাপক . বোরহান উদ্দিন খান, আইনজীবী দিলরুবা শরমিন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের প্রত্যাশা অভিন্ন নয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, একাত্তরের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে চব্বিশে এসে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দেশে সংবিধানের পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে গোঁজামিল দিয়েই সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে বারবার। এজন্য সেটা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, সব ধরনের মতামতকে সঙ্গে নিয়েই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে দেশ এগিয়ে যাবে। এ বিষয়ে বর্তমান অনর্তবর্তীকালীন সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না, সিদ্ধান্ত দেবে ছাত্র-জনতা।

সংবিধানের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটা পুনর্লিখন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মনে করেন ড. আলী রীয়াজ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদেধারায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেটি সংশোধন করার সুযোগ নেই। কোনো দল নির্বাচনে ৩০০ আসন পেলেও তারাও সংবিধান যেন পরিবর্তন করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে পুনর্লিখনে। সহনশীলভাবে মত প্রকাশ এবং মত প্রকাশে সংখ্যালঘুর নিশ্চয়তা বিধানই হচ্ছে গণতন্ত্র উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের সেই গণতন্ত্র পুনর্গঠন করতে হবে। তাই সংবিধানে হাত দেওয়া ছাড়া  আর কোনো পথ দেখতে পাচ্ছি না আমি।

আদালতকে ব্যবহার করে আর কোনো অবৈধ রায় দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। জনগণের বৃহত্তর অংশ কী চাচ্ছে, সংবিধানে সেটায় গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজুল আলম। বলেন, যে ত্যাগে বর্তমান দেশ আমরা পেয়েছি, সংবিধানে তার প্রতিফলন থাকতে হবে। একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা বাদ দেওয়া হলে সংবিধান পুনর্লিখন আত্মঘাতী হবে বলেও মনে করেন তিনি।

মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার উপর গুরুত্বারোপ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্জুর হাসান বলেন, এতে অনেক বিতর্ক এড়ানো যাবে।  সংবিধান সংসদ সংশোধন করতে পারে জানিয়ে অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান বলেন, সংবিধান পুনর্লিখন চাইলেই করা যায় না। তবে ১৯৭১-এর প্রেক্ষাপটে  লেখা সংবিধান দিয়ে এখনো চলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন জেড আই খান পান্না।

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর