দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। গ্যাসের সংকট, ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ কমে যাওয়া, এলএনজি টার্মিনাল নষ্ট হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিলেও আপাতত এ সঙ্কট কাটছে না। চলতি সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা মেনে নিতে হবে গ্রাহককে, এমনটাই জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের কাছে থেকে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যে বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সভাকক্ষে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্সের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা।
লোডশেডিংয়ের কারণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, একসঙ্গে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তাই লোডশেডিং হচ্ছে। হঠাৎ কারিগরি ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। রামপালের একটি ইউনিটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। গ্যাস সরবরাহ ঠিক থাকলে সংকট সামাল দেওয়া সহজ হতো। কিন্তু সামিট গ্রুপের এফএসআরইউ (ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল) কয়েক মাস ধরে বিকল থাকায় গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো যাচ্ছে না।
উপদেষ্টা জানান, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রামপাল দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলএনজি আমদানির কাজ চলছে। ১৫-২০ দিনের মতো সময় লাগবে, এরপর গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি।
পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বুধবার সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ২১৮ মেগাওয়াট, বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ২৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ১ হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার সরকারের রেখে যাওয়া ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল তিন মাসের বেশি সময় নষ্ট থাকার পর ঠিক হলেও এখন সরবরাহের মতো গ্যাস নেই। আদানির বিল পরিশোধ করতে না পারায় সরবরাহ কমে এসেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়া, এ কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না। গ্যাস থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গেলেও গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এখন ৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট মিলছে। ফলে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান ভারতীয় কোম্পানি আদানি গ্রুপের পাওনা টাকা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অর্থের সংকট নেই। সোনালী ব্যাংকে ১০০ মিলিয়ন টাকা দিয়ে রাখলেও ডলারের অভাবে দিতে পারছে না তারা। আদানির বিদ্যুৎ পেতে কোনো সমস্যা হবে না, তাদের সরবরাহ বাড়াতে বলা হয়েছে।
গ্যাসের সংকট সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সামিটের টার্মিনাল নষ্ট হওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি অর্ডার বাতিল করা হয়েছিল। এখন সেটা ঠিক হওয়ায় নতুন করে এলএনজি আমদানি করা হবে। এতে ১৫-২০ দিনের মতো সময় লাগবে। কেননা অন্তর্র্বতী সরকার বিশেষ আইন বাতিল করায় এখন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করতে হবে।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে