আইনের জালে শেখ হাসিনার দুই ডজন মন্ত্রী-এমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশে ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পরে শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের অনেক মন্ত্রী ও এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা হযেছে। হত্যাসহ নানা মামলায় ইতোমধ্যে পতন হওয়া সরকারের অন্তত দুই ডজন মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। শীর্ষ থেকে শুরু করে দলের তৃণমূলের অনেক নেতা, সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা এমপি এখন গ্রেপ্তার মামলা আতঙ্কে ভুগছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে কেউ দেশে অনেকটাই গা ঢাকা, কেউ বা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন।  গ্রেপ্তার মন্ত্রী-এমপিরা রিমান্ড শেষে অনেকে কারাগারে দিনাতিপাত করছেন।

জানা গেছে, থানায় হওয়া মামলায় নামীয় আসামির পাশাপাশি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের নামে এখনো মামলা হয়নি, তাদের কাছে এ অজ্ঞাতনামা আসামি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বিভিন্ন কৌশলে মামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৬ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মন্ত্রী, আর্থিক অনিয়মের জন্য সমালোচিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার। এর মধ্যে দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ  রোববার রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী  আসাদুজ্জামান নূর ও প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী

শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু হয়। পরে একে একে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খনিজসম্পদ বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক--ইলাহী চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ ফিরোজ এবং সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে আটক করা হয়। এছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের এমপিদের মধ্য নেত্রকোনা- আসনের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মাদারীপুর- আসনের দলের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, চট্টগ্রাম- আসনের বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, কক্সবাজার--এর আব্দুর রহমান বদি, বরিশাল- আসনের শাহে আলম তালুকদার, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম লতিফ, ঠাকুরগাঁও- আসনের রমেশ চন্দ্র সেন, ঢাকা- আসনের হাজী সেলিম, ঠাকুরগাঁও- আসনের মাজহারুল ইসলাম সুজন, ঝিনাইদহ- আসনের নায়েব আলী জোয়ার্দার, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেনী- আসনের নিজামউদ্দিন হাজারীকে সেনাবাহিনী বিজিবি আটক করে। গ্রেপ্তার হয়েছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদ।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, মামলার সঠিক তথ্য নিরূপণ করা এখন সম্ভব না হলেও তাদের শেখ হাসিনা, তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলার সংখ্যা দেড়শ পেরিয়ে গেছে। গত শনিবার ঢাকার পল্টন থানায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের  শীর্ষ প্রায় সব নেতাকে আসামি করা হয়েছে। তবে সেই মামলায় নাম ছিল না শেখ হাসিনার। এখনো মামলা চলমান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি, মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের নামে খুলনা বিভাগে অন্তত ৪৩টি বরিশাল বিভাগে ১৯টি, রংপুর বিভাগে ২১টি মামলা, সিলেটে অন্তত দুই ডজন, চট্টগ্রাম বিভাগে অন্তত ৫০টি, রাজশাহী বিভাগে অন্তত ৪৫টি মামলা ঢাকা বিভাগে শতাধিক মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলছেন কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করতেই এসব মামলা হয়েছে। ঢালাওভাবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামে হত্যা মামলা হচ্ছে। এসব মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে।

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর