একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এ মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য। বিগত সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে এ বার্তা দিয়েছেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (সেপ্টেম্বর ২৭) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া নিজের ভাষণে এ বার্তা দেন ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে জানান, দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সব রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে। রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।
নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস তার ভাষণে জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে মুখোমুখিভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি- কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি কার্যকর গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের আবর্তে বন্দী রাখা হয়েছিল; জনগণের অর্থ-সম্পদকে চরমভাবে লুটপাট করা হয়েছিল, একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সব ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করেছিল। সেই সঙ্গে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। প্রত্যেকটি পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা কীভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, সেটাও আমরা দেখতে পাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেন, যে রাষ্ট্রকাঠামো দুঃসহ হয়ে গেছে, তার পুনর্গঠনের জন্য আমাদের তরুণেরা এবং দেশের আপামর জনসাধারণ একমত হয়ে সরকার পরিচালনার এক মহান দায়িত্ব আমার এবং আমাদের উপদেষ্টাদের উপর অর্পণ করেছে। তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে আমরা যেমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তেমনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবে, ভয়-ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।
বাংলাদেশ যে সব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পক্ষভুক্ত, সেগুলো প্রতিপালনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে ড. ইউসূস বলেন, জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক বিশ্বকাঠামোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান অব্যাহত থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে