৩ বিঘা জমি বর্গা আর এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বেগুন আবাদ করেছেন রফিকুল ইসলাম পল্টু। বেগুন বিক্রি করে কিস্তি পরিশোধ করে লাভের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে এখন রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ধুকছেন তিনি। কারণ ক্ষেতে ফলন আসার সময়ে বেগুন গাছের পাতা হলুদ বর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। রোগ নিমূলে কীটনাশক প্রয়োগেও মিলছে না কাঙ্খিত ফলাফল। ফলে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে।
পল্টু ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের গোয়ালকারী গ্রামের বাসিন্দা। রোগের কারণে কাঙ্খিত ফলন না পাওয়ায় দেড় লাখ টাকা লোকসান হবে বলে মনে করছেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধ ও সংসারের ব্যয় বহন নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তার।
পল্টুর মতো ওই গ্রামের সাইদুল হক, তানজামুল, আবু হোসেনসহ আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় ৮ শতাধিক কৃষক বেগুন আবাদ নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে বেগুন চাষাবাদ করলেও এর আগে কোন সময় একসাথে এতজন কৃষককে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।
সাইদুল হক জানান, গত বছরের চেয়ে এবার দুই বিঘা জমি বাড়িয়ে ৫ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন তিনি। চারা লাগানোর পর থেকেই কৃষি শ্রমিকদের সাথে পরিচর্যা করে আসছেন তিনি। বেগুন ধরার উপর্যুক্ত সময় হওয়ার পর থেকে গাছগুলো রঙ বদলে গিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করা শুরু হয়। প্রথমে একটা দুটো গাছে এসব সমস্যা দেখা দিলেও এখন শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত হলুদ হয়ে গেছে। গাছে এখন ফুল ফুটলেও বেগুনে রুপান্তর না হওয়ার আগেই ঝড়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ডালপালা পচন দেখা দিচ্ছে, এরপরে কিছুদিন পর গাছ মরে যাচ্ছে।
কৃষক তানজামুল হক জানান, বিভিন্ন কোম্পানীর পরামর্শে প্রতিনিয়ত বেগুন ক্ষেতে স্প্রে দিচ্ছি। কোন প্রতিকার মিলছে না। গোয়ালকারী, জাউনিয়া, সাবাজপুর, চাড়োল গ্রামের ৮ শতাধিক কৃষক বেগুন চাষাবাদে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। এই সময়ে প্রতি বিঘায় বেগুন কমপক্ষে ১৫-২০ মণ ফলন আসার কথা। অথচ ৫-১০ কেজি বেগুন পাওয়া যাচ্ছে না ক্ষেতে।
গোয়ালকারী, জাউনিয়া ও সাবাজপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোয়ালকারী গ্রামেই প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক, জাউনিয়া গ্রামে ৩শ, সাবাজপুর গ্রামে দেড়শ এবং চাড়োল গ্রামের শতাধিক বেগুন ক্ষেতের এমন সমস্যা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এসব বেগুনক্ষেত নষ্ট না হলে কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারতো এসব এলাকার চাষীরা।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, একই জমিতে একই ফসল একাধিকবার উৎপাদনের কারণে এ সমস্যা হতে পারে। কৃষি অফিসের পরামর্শ না মেনে বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানীকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করেই ঠকছেন তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল মুঠোফোনে জানান, সাদামাছির আক্রমণে এসব রোগ ছড়ায়। শুধুমাত্র বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নয়, আশপাশের উপজেলাগুলোতেও এমনটা হয়েছে। চাষীদের বেশ কয়েকজন উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে বেগুন ক্ষেত রক্ষাও করেছেন বলে জানা তিনি।
বিডি২৪অনলাইন/সামানুর ইসলাম/সি/এমকে