কমপক্ষে ৩৫০০ মানুষ গুমের শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ নভেম্বর ২০২৪

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকারের সময় জোরপূর্বক গুমের সংখ্যা কমপক্ষে ৩৫০০ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গেল ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত গুমের বিষয়ে প্রায় ১৬০০টি অভিযোগ পেয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। কারা গুম সংক্রান্ত অপরাধ করেছে এবং কারা তাদের নির্দেশ দিয়েছে, সেটা চিহ্নিত করতে কাজ করছে এ কমিশন।  

শনিবার ( নভেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে এক বৈঠকে বিষয়টি জানান গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কমিশন সদস্যদের এ বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা উপস্থিতিতে ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলপূর্বক গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের জবাবদিহি করতে কমিশনকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বিষয়টি জানানো হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনকে বলেন, আপনাদের যা কিছু প্রয়োজন, তার সব দেব এবং সব ধরনের সহায়তা করব। গুম প্রসঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বৈঠকে বলেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১৬০০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪০০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। আর ১৪০ অভিযোগকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা বলেন, এনিয়ে আরও কাজ করার আগে আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে সরকারকে অন্তর্র্বতীকালীন প্রতিবেদন দেবেন তারা। তারা বলেন, ভুক্তভোগীদের অনেকেই এখনো কারাগারে রয়েছেন। কেউ কেউ মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। কারণ গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল তাদের। তাছাড়া গুমের শিকার কিছু ব্যক্তি ভারতের কারাগারে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের যেখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, গোপন সেই স্থানের আলামত রক্ষার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।

 

এদিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রয়োজনে কমিশনের মেয়াদ দুই বছর বাড়াবে সরকার। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষায় আইনি ব্যবস্থা তৈরিসহ প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবে।

বৈঠকে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, অভিযোগের সংখ্যা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছেন তারা। কেননা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতিশোধের ভয়ে এখনও কমিশনে আসছেন না ভুক্তভোগীদের অনেকে। গুমের ঘটনার সংখ্যা এখন পর্যন্ত যতটা রিপোর্ট হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করছেন তারা।

কমিশনের আরেক সদস্য বৈঠকে বলেন, ভুক্তভোগীদের অনেক বলেছেন- তারা বছরের পর বছর সূর্য দেখেননি। যখন সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হতো, তখনই কেবল উপলব্ধি করতে পারেন, এটি একটি নতুন দিন। গুমের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্ভব হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

এদিকে বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রয়োজনে কমিশনের মেয়াদ দুই বছর বাড়াবে সরকার। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষায় আইনি ব্যবস্থা তৈরিসহ প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবে।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কমিশন অভিযুক্তদের তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেবেন তারা। বৈঠকে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, নুরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, এম সাখাওয়াত হোসেন, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর