নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় ১২ জন ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১১জনই শনাক্ত হয়েছে নাজিরপুর ইউনিয়নের চাকআদালত খাঁ গ্রামে। বাকিজন একই ইউনিয়নের গ্রামের মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু, নারীসহ একই পরিবারের ৫জন রয়েছেন। গত দুই মাসে এসব রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিকে গবাদিপশুর রোগ ‘অ্যানথ্রাক্স’ মানবদেহে ছড়িয়ে পরায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এর আগে ওই ইউনিয়নেই অন্তত ৩০টি গরু-ছাগল ‘অ্যানথ্রাক্স’ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর‘অ্যানথ্রাক্স’ আক্রান্ত গরুর মাংস গ্রামের মানুষের কাছে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। মূলত ‘অ্যানথ্রাক্স’আক্রান্ত গরুর মাংস কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতরা রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে গ্রামে ‘অ্যানথ্রাক্সে’র প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে রোগ তত্ত, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি টিম। গবেষণা টিমের প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক রহমান বলেন, শুধু চকআদালত খাঁ গ্রামেই ১১ ব্যক্তির শরীরে ‘অ্যানথ্রাক্সে’র মতো সংক্রমণ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতস্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকআদালত খাঁ গ্রামের মোল্লা পাড়ার জুয়েল মোল্লা ও তার স্ত্রী মিলি খাতুন, তাদের শিশু সন্তান জুঁই এবং জুয়েলের বোন জলি খাতুন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী জুয়েল মোল্লা জানান, ৭ লাখ টাকা মূল্যের ৬টি গাভি পালন করছিলেন তিনি। একমাসের ব্যবধানে ৪টি গাভিই অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় জবাই করে কম দামে মাংস বিক্রি করেছেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওই গাভীগুলো ‘অ্যানথ্রাক্স’ আক্রান্ত ছিলো কিনা সেটা তার জানা নাই। তবে তিনি ও তার পরিবার এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে জুয়েলের ‘অ্যানথ্রাক’ আক্রান্ত গরু জবাইসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করায় একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ওই গ্রামের ইরফান মোল্লা, মনিরুল ইসলাম, রাজু আহম্মেদ, সাকিমুদ্দিন, আতাউর রহমান, মজনু, আব্দুল মান্নান ও মামুদপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন।
অ্যানথ্রাক আক্তান্ত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যমতে, গত দুই মাসে শুধু চকআদালত খাঁ গ্রামেই অন্তত ১৩টি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব গরু জবাই করে গ্রামে মাংস বিক্রি করা হয়েছে। সবশেষ জুয়েল মোল্লার গরু জবাই থেকে শুরু করে মাংস বানানোর কাজে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের হাতে পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচির মতো বের হয়ে বড় ঘায়ে রূপ নিতে শুরু করেছে। বর্তমানে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, অ্যানথ্রাক সন্দেহে গত এক সপ্তাহে চারটি গরু জবাই করে মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে। আক্রান্ত ধারণা করে তিনটি গরুর রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া বুধবার থেকে উপজেলা ব্যাপি অ্যানথ্রাক প্রতিরোধে গবাদি পশুর শরীরে টিকাদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক অহিদুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘অ্যানথ্রাক’ রোগীদের তালিকা প্রস্তুত করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে