শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে ২৪ হাজার কোটি ডলার পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ ডিসেম্বর ২০২৪

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে ২৪ হাজার কোটি ডলার অর্থ পাচার হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে পাচার করা অর্থের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলার, বার্ষিক জিডিপির ৩.৪ শতাংশ। শুধু অর্থ পাচারই নয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয়ের ৪০ শতাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে এ সময়ে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অনিয়মিত ঋণের মাধ্যমে এ অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ অর্থ পাচার দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ও জাতিকে জানাতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিশেষ করে ব্যাংকিং, অবকাঠামো এবং সরকারি খাতের দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। রোববার (১ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রতিবেদনে অর্থপাচার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দেশ থেকে প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস, বাহামাস এবং অন্যান্য ট্যাক্স হ্যাভেন দেশগুলোতে অর্থ পাচার করা হয়েছে। মূলত তিনভাবে বিভিন্ন অর্থপাচার করা হয়েছে। প্রথম ধাপে পাচারকৃত অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে,  এরপর উৎস গোপনের জন্য অর্থকে বিভিন্ন চ্যানেলে সরানো হয় এবং পাচার অর্থ বৈধ উপায়ে দেশে ফিরতে না পারে, সে জন্য তৃতীয় ধাপে পাচার অর্থকে বৈধভাবে পুনঃস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের উন্নয়নের আখ্যান মূলত ভঙ্গুর ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে। এটা পদ্ধতিগত দুর্নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মের জর্জরিত। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি জানিয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও আর্থিক কারচুপির যে চিত্র পাওয়া গেছে,  সেটা রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার মতো।

প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, আমাদের জন্য প্রতিবেদন একটা ঐতিহাসিক দলিল। জাতি নথি থেকে উপকৃত হবে। তিনি জানান, আর্থিক খাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সেটা ছিল একটা আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়। আমাদের সামনে ঘটনা ঘটলেও কেউ এটা নিয়ে কথা বলিনি। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি, সেটা রিপোর্টে উঠে এসেছে।

শ্বেতপত্র প্রণনয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, তাদের কমিটি সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে কীভাবে চামচা পুঁজিবাদ (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে- এসব বিষয় উঠে এসেছে।

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর