বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সুখে-শান্তিতে আছেন। এখানে কোনো ধরণের সাম্প্রদায়িক কোনো বিভেদ নেই। দেশে থাকা চার ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্য আছে। তাই কে কোথা থেকে কী প্রচার করল, সেটা নিয়ে চিন্তার কিছুই নেই। দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এ দেশের সব শ্রেণি-ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের শীর্ষ নেতারা। বৈঠক শেষ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তারা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর প্রতিবেশি দেশ ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে চরমভাবে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসী যেন জানতে পারে, তাই বৈঠকে এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন করার প্রস্তাবও দেন নেতারা। রাজধানী ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিভিন্ন ধর্মের মোট ৩২ জন প্রতিনিধি অংশ নেন এবং ২৬ জন বক্তব্য দেন।
বৈঠকে সব ধর্মের নেতারা বলেছেন, এ দেশে সব ধর্মের মানুষই ভালো আছেন। শুধু ভারতীয় মিডিয়া অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করছে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের মনের নানা প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার উদ্দেশ্য- বিষয়টি উল্লেখ করে বৈঠকের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, অভ্যুত্থানের পর এ সরকার যখন গঠন হয়, তখন আমি বিমানবন্দরে সবার কাছে আন্তরিকভাবে একটা আহ্বান জানিয়েছিলাম, আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত, নানা ধর্ম ও নানা রীতিনীতি থাকবে। কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আমরা মতপার্থক্য সত্ত্বেও কারও শত্রু নই, সবাই এক কাতারে চলে আসি। আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশি এবং এক পরিবারের সদস্য।
বৈঠকে শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহম্মদ ফয়েজ, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, বায়তুল মোকাররমের খতিব আবদুল মালেক, মুফাসসির আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার এবং হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজেদুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, মুহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমদ আলী কাসেমি, আব্দুল কুদ্দুস, বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, অর্থ সম্পাদক মনির হোসাইন কাসেমি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর আমির জুনায়েদ আল হাবিব এবং সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের পুরোহিত অবিনাশ মিত্র, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, রমনার স্যান মেরিস ক্যাথিড্রালের প্রধান পুরোহিত অ্যালবার্ট রোজারিও, লক্ষ্মীবাজারের সেইন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র উপদেষ্টা সিস্টার রেভা ভেরোনিকা ডি কস্তা, গারো সম্প্রদায়ের জনসন ম্রি কামাল প্রমুখ।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের শায়খ আহমদুল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় আছে, কোনো ফাটল নেই। প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন, একটি সুন্দর সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে তারা কাজ করছেন, যেখানে কোনো ভয় থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। সম্প্রীতির বাংলাদেশকে বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে যেতে চাই আমরা। তিনি আরও বলেন, অপপ্রচার যারা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষে কথা বলতে হবে। জবাব দিতে হবে। আমাদের ওপর মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, একটি মানবিক রাষ্ট্র চাওয়া আমাদের, যে পরিবেশটা ৫ আগস্টের পর তৈরি হয়েছে। শান্তি-সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চাই আমরা, যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন করা যায় কি না সেই প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। আমাদের চার ধর্মের মধ্যে যে ঐক্য আছে, সেটা যেন অটুট থাকে; সব অধিকার যাতে নির্বিঘ্ন হয়- এসব বিষয়েও কথা বলেছি। ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, আমরা দেশে ভালো আছি। কে কোথায় বা কোন দেশে কি প্রচার করছে, সেটা তাদের বিষয়। আমরা শান্তিতে আছি। পুরোহিত অ্যালবার্ট রোজারিও বলেন, আমরা সবাই একমত প্রকাশ করেছি, বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। হিন্দু ভাই-বোনদের মনে ইসকনের বিষয়ে সৃষ্ট ক্ষত নিরাময় করতে হবে। তিনি বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সংলাপের ব্যবস্থা করা হোক। এর মাধ্যমে বিশ্বের মিডিয়া জানাতে পারবে বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রীতির মানুষ, একসঙ্গে থাকে তারা।
রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের পুরোহিত অবিনাশ মিত্র বলেন, দেশে আমরা ভালো আছি। কারও মধ্যে কোনো বিভেদে নেই। তবুও বিভেদ কারা করছে, ওখানে বসে তাদেরই লোক প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এ দেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই এক। তিনি বলেন, আমাদের এক ভাইকে কে মেরেছে, সেটাকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু এটাকে পুঁজি করে বাইরের রাষ্ট্র বড় কিছু করবে, সেটা চাই না আমরা। হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে সবার অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই আমরা। কেউ অন্যায় করলে তাকে চিহ্নিত করে বিচার করা হোক।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে