অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে চলতি মাসেই ঘোষণা আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেছেন, নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে নেওয়া উচিত। এখন যদি সরকার নির্বাচন দেয়, তবে সেটা হবে সেকেলে আর তখন পুরোনো সব সমস্যা আবারও ফিরে আসবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। ১৯ সদস্যের কূটনীতিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার।
বৈঠকে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুরোনো প্রচলিত সমস্যা পরিহারে নির্বাচন সংক্রান্ত কতিপয় সংস্কার নির্বাচনের আগেই শেষ করা জরুরি। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারকে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করতে হবে।
বৈঠকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। এ জন্য নতুন নীতি এবং নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন কথাও জানান তিনি।
নির্বাচন করতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও তার সরকার আগ্রহী বলেও বৈঠকে জানান প্রধান উপদেষ্টা। কূটনীতিকদের উদ্দেশে বলেন, জনগণকে সরকারের দুটি দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। এর একটি হলো নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং অন্যটি হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করা। তিনি বলেন, ১৫টি বিভিন্ন কমিশন রয়েছে। চলতি মাসের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত এ কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন পেশ করবে বলেও আশা করছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংস্কার হলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে সরকার। দুটি প্রক্রিয়া আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে বৈঠকের শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। এখন আমাদের বিজয়ের মাস। আর বৈঠকটি একটি বিশেষ মুহূর্ত। এটাই বাংলাদেশের প্রতি আপনাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু অপপ্রচার ও ভুল তথ্য প্রচারের পরও বাংলাদেশে শক্তিশালী ঐক্য বিরাজ করছে বলেও জানান অধ্যাপক ইউনূস।
প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রদূতরা হলেন- ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, রাষ্ট্রদূত ও ইইউ প্রধান মাইকেল মিলার, ঢাকায় নেদারল্যান্ডসের অন্তবর্তী চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আন্দ্রে কারস্টেন্স এবং বাংলাদেশে প্রতিনিধিদল।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে