গুমের ঘটনায় বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের অন্তর্বতী জমা দেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গত ১৫ বছরে সংঘটিত গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক, ৭৫৮টি যাচাই-বাছাই করেছেন কমিশনের সদস্যরা। শুধু শেখ হাসিনাই নয়, তার প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে গুমের ঘটনায়। এ তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। প্রতিবেদন পাওয়ার পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আগামী মার্চে আরও একটি ইন্টারিম রিপোর্ট দেবেন তারা। পুরো কাজ শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন।
গুমের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা এমনভাবে কাজটি করেছেন, যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে, আর পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী আরও জানান, গুমের শিকার অনেকে এখনো শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন এতটাই চালানো হয়েছিল, যে কারণে এখনো ট্রমায় ভুগছেন তারা।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা তার সবশেষ বক্তব্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও সঠিক বিচারের আশ্বাস দেওয়ার পর গুমের বিষয়ে অভিযোগ অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে আয়নাঘর পরিদর্শনের অনুরোধ করেন। বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আয়নাঘর পরিদর্শন করলে ভিক্টিমরা অভয় পেতে পারেন। তাদের যুক্তির সঙ্গে সম্মতি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাদের জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যেই জয়েন্ট ইন্টারোগেশন (আয়নাঘর) দেখতে যাবেন তিনি। সেই সঙ্গে কাজটি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রধান উপস্টোর কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন, উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে