দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ বকেয়ার কারণে জ্বালানি সরবরাহে বেড়ে চলেছে ঝুঁকি। চলতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি যথেষ্ট সরবরাহ না পাওয়া গেলে সামনে গ্রীষ্মে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণত মার্চ মাস থেকে দেশে গরম শুরু হয়। এরপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়তে থাকে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বকেয়ার পরিমাণ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বকেয়া ৪২ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সাল থেকে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। সে সময় জ্বালানি আমদানি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্ত বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদন হয়নি। ফলে গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে দেশ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত বাড়িয়ে তুলেছে খরচের ভার। পরিকল্পনা ছাড়াই একের পর এক গড়ে তোলা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানির দিকে ঝোঁকা হয়েছে। এতে ডলার চাপ তৈরি করেছে রিজার্ভে।
তথ্য বলছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত পিডিবির বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় বিদ্যুত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানির কাছেই তাদের বকেয়া ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বকেয়া শোধে জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে আদানি।
ওদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ কেন্দ্রগুলোর কাছে গ্যাস বিল বকেয়ার পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা। বকেয়া ঠিকমতো পরিশোধ না হলে গ্যাস সরবরাহে বেশ বেগ পেতে হবে পেট্রোবাংলাকে।
পিডিবির কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের পাওনাও রয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা শোধ না হলে কেন্দ্রগুলো জ্বালানি আমদানি করে উৎপাদন ধরে রাখতে পারবে না বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এর বাইরে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, বিল পরিশোধে পেট্রোবাংলা, পিডিবি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের চাহিদা দিয়েছে এ বছর। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জ্বালানি তেলের বকেয়া শোধ হলেও এখনো শোধ হয়নি বিদ্যুৎ-গ্যাসের বকেয়া।
ওদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকির টাকা ছাড় দিলে বকেয়া পরিশোধ সম্ভব হবে বলে পিডিবি সূত্রে জানা গেছে। সুত্রমতে, বকেয়া নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংস্থাটির আলোচনাও হচ্ছে। ভর্তুকি পাওয়া গেলে পিডিবির চাপ অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সামনে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দিকে লক্ষ্য রয়েছে পিডিবির।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে