ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ইউনিয়ন বিএনপি'র সম্মেলন স্থগিতকে কেন্দ্র করে সংক্ষুদ্ধ প্রার্থীদের ডাকা হরতাল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। দুওসুও ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক শনিবার দুপুরে অন্যসব প্রার্থীর পক্ষ থেকে হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

এর আগে শনিবার সকালে এ হরতাল শুরু হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি'র সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে ডাকা এ হরতালে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তার চারটি রাস্তায় বাঁশ-বেঞ্চ দিয়ে বন্ধ, ঠাকুরগাঁও শহর থেকে উপজেলার প্রবেশপথ কালমেঘ বাজারে গাছ ফেলে হরতাল পালন করে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।

হরতাল চলাকালে ছেলেকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিল আমজানখোর ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। রাস্তা বন্ধের কারণে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে ফেরত গেছেন বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতালে। ফিরে যাওয়ার সময় সাইফুল ইসলাম জানান, নিজেদের মধ্যে কোন্দল, হরতাল ডেকে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। আমরা হরতাল-অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে হয়রানীতে ফেলবে- এমন রাজনীতি চাই না।

ঢাকা থেকে বাড়ী ফিরছিলেন ভানোর ইউনিয়নের রকিবুল ইসলাম। তিনি জানান, কালমেঘ বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তা প্রায় ৩ কিলোমিটার হেটে আসতে হলো। হরতালের যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফিরে গেছে নৈশ্যকোচ।

স্টার মডেল স্কুলের পরিচালক রেজাউল ইসলাম জানান, সকালে স্কুলবাসে শিক্ষার্থীরা আসতে পারেনি। বাইপাস সড়ক দিয়ে কোনমতে নিয়ে আসতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেকেই ভয় পেয়েছে। হটাৎ করে হরতালের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাকে।

হরতাল ডাকার কারণ হিসেবে উপজেলা বিএনপি'র নেতাকর্মীরা জানান,  শনিবার সকালে কালমেঘ আর আলী এন্ড কলেজে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি'র ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী দুওসুও ইউনিয়ন বিএনপি'র সম্মেলনের জন্য ভোটগ্রহণের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের কথা ছিল। শুক্রবার রাত ১১টায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ইউনিয়ন সম্মেলন স্থগিত করে জেলা বিএনপি'র যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলীর স্বাক্ষরিত পত্র উপজেলা বিএনপি'র হাতে পৌছালে ওই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে রাতেই বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল করে বিএনপি'র নেতা-কর্মীরা। রাতের মিছিলে শনিবার ভোর থেকে ২৪ ঘন্টা হরতালের ডাক দেয় ইউনিয়ন বিএনপির সংক্ষুদ্ধ প্রার্থীরা।

উপজেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক ড. টিএম মাহবুবর রহমান জানান, সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা আসার পর প্রার্থীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ মিছিলের পর হরতালের ডাক দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করেছি আটকানোর, কিন্তু বিক্ষুদ্ধ প্রার্থীরা মানেনি। একাধিকবার সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় এমনটা হয়েছে।

দুওসুও ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক জানান, সম্মেলনকে ঘিরে প্রায় এক মাস ধরে প্রচারণা, পোস্টার ছাপানো, ভোটারদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভোট চাওয়া শেষ করেছে প্রার্থীরা। আজ ভোটগ্রহণ হলেই জাকজমক ভাবে সম্মেলনের আয়োজন হতো। সকালবেলা ভোটগ্রহণ, আগের রাতে স্থগিত এটা কেউ মানতে পারেনি। তাছাড়া উপজেলা বিএনপি'র সাথেও সমন্বয় করেনি জেলা বিএনপি'র নেতারা।

গত ২২ জানুয়ারি দুওসুও ইউনিয়নসহ ৪টি ইউনিয়নে সম্মেলনের তফশীল ঘোষণা করেছিলেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদক মকবুল হোসেন। তিনি শনিবার দুপুরে জানান, হরতালের বিষয়টি বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নজরে এসেছে। তিনি হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দিয়েছেন। মহাসচিবের নির্দেশনা শোনার পর সকলেই হরতাল কর্মসূচী প্রত্যহার করে নিয়েছে।

বিডি২৪অনলাইন/সামানুর ইসলাম/সি/এমকে