সরাসরি গুলি করে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ক্ষমতা ধরে রাখতে ও আন্দোলন দমাতে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।   কাজে ব্যবহার করা হয়েছে পুলিশ দলীয় বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাকে। আন্দোলন চলাকালে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত হাজার ৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়,  নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। অনেককে সরাসরি কাছ থেকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) -এর তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আন্দোলন দমাতে গণগ্রেপ্তার, চিকিৎসাসেবায় বাধা, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ, সাংবাদিক সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ, নারী শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করাসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্দোলনের শুরুর দিকে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদের ওপর ধারালো অস্ত্র লাঠি দিয়ে আক্রমণ চালায় ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। নারী শিক্ষার্থীদের যৌন সহিংসতার হুমকি দেওয়াসহ মারধর করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন আহত শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর্যন্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ছাত্র-জনতার ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে। রাইফেল শটগান দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি চালানো হয়। বলপ্রয়োগের পাশাপাশি ১১ হাজার ৭০০-এর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী  বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের অপহরণ গোপনে আটকে রাখা হয়। আটকদের মধ্যে অনেককে বৈদ্যুতিক শক, মারধর মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়। এ সময় আটক নির্যাতনের শিকার হয় অনেক শিশুও।  কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদর দপ্তর শিশুসহ আটকদের বন্দিস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

শুধু তাই নয় আন্দোলনে আহত বিক্ষোভকারীদের অ্যাম্বুলেন্স আটকে হাসপাতালে যাওয়া বাধাগ্রস্ত করা হয়। আহতদের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাসেবা বাধাগ্রস্ত করেছিল গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।  এ সময় প্রায়ই হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহতদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। চিকিৎসকদের জিম্মি করে মেডিকেল রেকর্ড নষ্ট করে মিথ্যা রিপোর্ট তৈরিতে বাধ্য করা হয়।

জাতিসংঘ তাদের প্রতিবেদনে আরও জানায়, বিক্ষোভ দমাতে কৌশলগতভাবে ইন্টারনেট এবং সমাজমাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এতে অন্তত ছয়জন সাংবাদিক নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হন। গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিক্ষোভ সম্পর্কে সত্য প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে চাপ দেওয়া হয়।

পরিস্থিতি হাতের মুঠোর বাইরে চলে যাওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বশেষ আগষ্টেরমার্চ টু ঢাকাকর্মসূচি শক্ত হাতে দমনে সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।   আগস্ট আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের শক্ত হাতে দমনের আহ্বান জানান। ছাড়ামার্চ টু ঢাকাকর্মসূচি ঠেকাতে রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী বিজিবি মোতায়েনের ঘোষণা দেন। সেনাবাহিনী বিজিবি সাঁজোয়া যান সেনা মোতায়েন করে ঢাকার প্রবেশের পথগুলো অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। অন্যদিকেউচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণকরার দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশকে। কিন্তু সেনাবাহিনীর অসহযোগিতায় শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে

 



মন্তব্য
জেলার খবর