খোলা তেলে প্রায় ৬৫ শতাংশের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ নেই বা থাকলেও অপ্রতুল পরিমাণে রয়েছে। ভিটামিনসমৃদ্ধ তেল না পাওয়ার কারণে খোলার তেলের বাজারজাতকরণ ঝুঁকিতে ফেলছে দেশের জনস্বাস্থ্য। তেলের গুণগত মান এবং সঠিক প্যাকেজিং নিশ্চিত না হলে প্রাপ্য পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদিকে শর্তসাপেক্ষে খোলার তেল ব্যবহার বন্ধ করতে শিল্প মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে কোনো কাজে আসছে না।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার বিআইপি কনফারেন্স রুমে "সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল : অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়" শীর্ষক এক কর্মশালা হয়। সেখানেই এসব বিষয় জানান বিশেষজ্ঞরা।
কর্মশালায় ভোজ্যতেলে ভিটামিনের ঘাটতির প্রভাবও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’-এর ঘাটতির কারণে শিশুদের মধ্যে অন্ধত্ব, হাড় ক্ষয় এবং হৃদরোগের মতো শারীরিক সমস্যা বাড়ছে। এ সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ সমৃদ্ধ তেল বাজারে আনতে হবে। পাশাপাশি ড্রামের খোলা তেলের বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে।
ওদিকে ২০১৩ সালে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণের আইন করা হয়েছে। তবে বাস্তবে খোলা তেলের ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি এখনো।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ অনুযায়ী প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতিতে ভুগছে। এ ভিটামিনগুলোর ঘাটতি শারীরিক সমস্যাই শুধুমাত্র সৃষ্টি করে না, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব অন্ধত্ব এবং গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যু বাড়ায়। ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস, হাড় ক্ষয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাজারে ড্রামে বিক্রি হওয়া ৬৫ শতাংশ খোলা তেলে ৫৯ শতাংশে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই। ৩৪ শতাংশ তেলে প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। মাত্র ৭ শতাংশ তেলে যথাযথ পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। এ ৭ শতাংশ আইন মেনে বাজারজাতকরণের শর্তসাপেক্ষে হতে পারে।
কর্মশালায় খোলার তেল সরবরাহের ব্যাপারটির খারাপ দিকও তুলে ধরা হয়। জানাননো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই নন-ফুড গ্রেড উপকরণে ড্রাম ব্যবহার করে। এগুলো মূলত কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হতো। এ ধরনের ড্রামে ভোজ্যতেল সংরক্ষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাঢ়া বড় আশঙ্কা থাকে- এতে ভেজাল মেশানোর।
কর্মশালায় জানানো হয়, ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর কার্যকর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ তেল বাজারে আনতে বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলেও জানানো হয় কর্মশালায়।
বিডি২৪অনলাইন/ইএন/এমকে