কানু সান্যাল, পাবনা
৬ মাসেও দৃশ্যত কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না পাবনা মানসিক হাসপাতালের বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি উদ্ধারে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার বাস্তবায়নে। ফলে বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি বিশ্বমানে উন্নিতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে পাবনাবাসীর মাঝে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দ্রুত জমি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন পাবনার সচেতন মহল।
জানা যায়, এ হাসপাতালকে বিশ্বমানের হাসপাতালে উন্নিতকরণে ইতোমধ্যে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দ্রুত পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে কিছু নির্দেশনা দিয়ে যায়। নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো- হাসপাতালটির বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি উদ্ধার করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা থাকায় ও জমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলা না থাকায় এ হাসপাতালকে বিশ্বমানের হাসপাতাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
হাসপাতালের একটি সুত্র জানান, এ হাসপাতালের মোট জমির পরিমান ১৩৩. ২৫ একর। এর মধ্যে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দেয়া হয়েছে ৩০ একর। বর্তমানে মানসিক হাসপাতাল খাজনা দিচ্ছে ৭৪ একর জমির। রহস্যজনকভাবে অবশিষ্ট ২৯.২৫ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন এসে এ তথ্য জানতে পারে। এরপর বেদখল হওয়া জমি দ্রুত উদ্ধারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশ দেয়।
সুত্র আরো জানায়, পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিক মো. মকবুল হোসেন (পাশা) জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় এ হাসপাতালের ২৯ একর জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধানে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মানসিক রোগী এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
এ ব্যাপারে পাবনা মানসিক হাসপাতারের পরিচালক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, জমির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে- সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হবে।
পাবনা গণপুর্ত বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার জানান, আমরা সাধারণত অবকাঠামো সংক্রান্ত কাজ করি। পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের হবে, সেটা আমরা শুনেছি। জমি নিয়ে সমস্যা আছে, সেটা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা মিতা জানান, মানসিক হাসপাতালের জমি বিভিন্ন নামে রের্কড হয়েছে। রেকর্ড পরিবর্তন করতে হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি।
পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান বলেন, আমার জানামতে মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের করার চিন্তা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী করছেন। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি- কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিম এখানে এসে পরিদর্শন করে যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা বাস্তবায়নে মানসিক হাসপাতালের পরিচালকের আগ্রহ কম। জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে মানসিক হাসপাতালের পরিচালক জেলা প্রশাসন, গণপুর্ত বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কারোর সাথে সমন্বয় করেননি। জমি কম হওয়ায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধের অভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে পাবনাবাসী শঙ্কিত।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, হাসপাতালটির ২৯.২৫ একর জমি উদ্ধারে সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। জমি অন্যান্য মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে আছে, সেটা আমরা হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। জমি উদ্ধারে সব সহযোগতিা করতে জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে। পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, এ ব্যাপারে কারো গাফিতলি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ হাসপাতাল বিশ্বমানের করতে যতো সহযোগীতা প্রয়োজন, আমি করতে প্রস্তুত আছি।
এমকে