সবাইকে সহায়তা করাই পুলিশের উদ্দেশ্য

১৮ এপ্রিল ২০২১

দেশে উদ্ভুদ করোনা পরিস্থিতিতে সরকার আরোপিত সাতদিন মেয়াদের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তারা। কাজ করছেন দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, সবাইকে সহায়তা করাই পুলিশের উদ্দেশ্য।

করোনা সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালনকালে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রদত্ত ব্যাখ্যায় এ কথা বলছে পুলিশ সদর দফতর। শনিবার (১৭ এপ্রিল) পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

ব্যাখায় বলা হয়, দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও অসহযোগিতার কিছু অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, এসব উঠে এসেছে গণমাধ্যমেও। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাই জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর বলছে, বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। ১৪ এপ্রিল ভোর হতে ২১ এপ্রিল মাঝরাত পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধের স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে গ্রীষ্মের এ দাবদাহে সার্বক্ষণিক রাস্তায় রয়েছে। পাশাপাশি চলমান রয়েছে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিয়মিত দায়িত্ব পালনও। দৃশ্যত বিনা কারণে বের হওয়া এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়ে এবং অহেতুক কাজে বের হওয়া থেকে তাদের বিরত রাখতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। এছাড়া বিনা জিজ্ঞাসাবাদে জরুরি প্রয়োজন নিরূপণ করার কোনও উপায়ও নেই।

জনকল্যাণে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে আইজিপি’র নির্দেশে জনস্বার্থে ১৩ এপ্রিল চালু হয়েছে মুভমেন্ট পাস। মুভমেন্ট পাস গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়, সরকার ঘোষিত জরুরি সেবায় নিয়োজিত কতিপয় পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য এ পাসের প্রয়োজন নেই- মুভমেন্ট পাস ব্যবস্থা উ‌দ্বোধ‌নের দিন প্রেস ব্রি‌ফিংয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা হ‌য়ে‌ছে। জরুরি কাজে যাতায়াতকারী ব্যক্তিরা পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রমের সুবিধার্থেই এ পাস সংগ্রহ করছেন।

১৭ এপ্রিল সকাল ১০টা পর্যন্ত মুভমেন্ট পাসের জন্য প্রায় ১৭ কোটির বে‌শি হিট বা চেষ্টা হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়- কী বিপুল সংখ্যক মানুষ মুভমেন্ট পাস পেতে চেষ্টা করেছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ একই সঙ্গে এই পাসের জন্য আবেদন করায় প্রথমদিকে সার্ভারের ওপর বাড়তি চাপ ছিল। সে জন্য সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত সংখ্যক সার্ভার বাড়ানো হয়েছে।

মুভমেন্ট পাস চালু হওয়ায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়েছে। এটা করোনার ভয়ানক সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারি নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সব পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় অনেক মানুষ নিয়ম ভেঙে বাইরে বেরিয়েছেন। অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদে বাইরে বেরোনোর স্বপক্ষে উপযুক্ত কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সম্মানিত কোনও কোনও নাগরিক মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে পরিচয়পত্র প্রদর্শনেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তীব্র অনীহা দেখাচ্ছেন। অনেকে ব্যর্থ হচ্ছেন পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে। সরকারি নিষেধ থাকার পরও সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত কোনও কোনও ব্যক্তি নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন। জরুরি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্টিকারযুক্ত গাড়িতে ব্যক্তি বিশেষের জন্য উপহার সামগ্রী বয়ে বেড়িয়েছেন, এমন সংবাদও মিডিয়ায় এসেছে। গাড়িতে চিকিৎসক নেই; চিকিৎসকের গাড়ি বলে দাবি করা হয়েছে; গাড়ির কাগজপত্র বলছে গাড়ি অন্যের নামে। ঘটছে এমন ঘটনাও। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় তর্কে জড়িয়েছেন কেউ কেউ। ফলে তার গাড়ির পেছনে লম্বা গাড়ির সারি তৈরি হয়েছে কোনও কোনও ক্ষেত্রে। উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ অনাবশ্যক ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে একতরফাভাবে পুলিশের ওপর দায় চাপিয়েছেন। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ভাইরাল করেছেন। অনেকেই জরিমানার অভিযোগ করেছেন। চলতি বিধিনিষেধের বাইরে সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় জরিমানা করেছেন পুলিশ সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্য আইনের প্রয়োগ করেছেন মাত্র। জরিমানা আরোপকারী পুলিশ সদস্যের এতে ব্যক্তিগত কোনও স্বার্থ নেই। পুলিশ চেকপোস্টে মিডিয়াকর্মীদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে কেউ কেউ পরিচয়পত্র দেখাতে অনীহা দেখিয়েছেন। পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া পুলিশের দায়িত্বেরই অংশ। এটি কেউ যেন হয়রানি মনে না করেন। পেশাগত বৈচিত্র্যের কারণে পুলিশের দায়িত্ব পালন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশকে সহায়তা করা প্রয়োজন। তাই করোনাকালে দেশের স্বা‌র্থে ও মানুষের জীবন রক্ষার্থে ও করোনার বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশের কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন, এটাই পুলিশের প্রত্যাশা।

করোনা সংক্রান্ত পুলিশের কর্মকাণ্ডের কথাও বলা হয়েছে ব্যাখায়, বলা হয়েছে-করোনাকালে পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ দেশের মানুষের পাশে থেকেছে। করোনার শুরুতে যখন প্রচণ্ড ভয় ও বিভীষিকা গ্রাস করেছে সারা পৃথিবীকে, সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে অনেকেই যখন দায়িত্বপালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে; তখন বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য জীবনের পরোয়া না করে ভালোবেসে মানুষের পাশে থেকেছে। করোনায় মৃতের জানাজা ও দাফন এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, চিকিৎসক ও জরুরি সেবাকর্মীদের যাতায়াতে সহায়তা, শিল্প উৎপাদন, কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বিপণনে সহায়তা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসা পেয়েছে পুলিশ।

কর্তব্যরত অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৬ এপ্রিল (২০২১) পর্যন্ত পুলিশের মোট ৯১ জন কর্মকর্তা ও সদস্য মারা গেছেন। অবসরোত্তর ছুটি ও অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ও সদস্য এবং পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা বিবেচনায় নিলে নিহতের এ সংখ্যা অনেক বেশি। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য। দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় আত্মোৎসর্গকারী এ বীর সেনানীদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ গর্বিত।

প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে করোনা মোকাবিলায় পৃথিবীর সফলতম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ পুলিশও সরকারের সব নির্দেশনা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও ডেডিকেশনের সঙ্গে পালন করেছে। ড. বেনজীর আহমেদের উদ্যোগে পুলিশ সদর দফতর দ্রততম সময়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিওর) প্রণয়ন করেছে। চালু হয়েছে প্যান্ডেমিক পুলিশিং, এটা সারা দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেছে। করোনার প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

 

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর