দীপক সরকার, বগুড়া
সোমবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর, প্রথমে প্রধান অতিথিসহ বিশেষ অতিথি ও আয়োজকদের বক্তব্য। পরে সাউন্ড সিস্টেমে ‘‘ আমার মাইঝা ভাই, সাইঝা ভাই কই গেলিরে, চল যাই ক্ষেতের কাটিতে”- আবহমান গ্রামবাংলার সারা জাগানো গান বাজতে শুরু করে। গানের সঙ্গে হাতে কাস্তে আর কোমরে গামছা বেঁধে ক্ষেতের মধ্যে নেমে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়া সেই একশ’ বিঘা জমির ক্যানভাসে আঁকা ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ চিত্রকর্মের ধান কাটার উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয়সহ স্থানীয় নেতারা। পরে এ উৎসবে মেতে ওঠেন স্থানীয় কৃষকরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং বেসরকারি কোম্পানি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী বালেন্দা গ্রামে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ নামে বিশাল আয়তনের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়। ব্যতিক্রমী এ আয়োজন ১৬ মার্চ বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হয়।
ধান কাটার উৎসবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সহসভাপতি মো. আব্দুল রাজ্জাক, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র চন্দ। ধানকাটা উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সদস্য সচিব কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন- বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
আয়োজকরা জানান, বালেন্দা গ্রামের দিগন্ত বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠের একশ’ বিঘা জমির গাড় বেগুনী ও সবুজ ক্যানভাসে ফুটে তোলা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, যার নাম দেয়া হয় ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। এমন উদ্যোগ সফল করতে ৪০ একর জমি লিজ নেয়া হয়। পরে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে লে-আউট তৈরি করা হয়। ১০০জন রেজিমেন্ট বিএনসিসি সদস্যের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়। একদল শুকনো জমিতে চীনের চু-চিং জং-ই সীড কোম্পানী থেকে আমদানীকৃত গাঢ় বেগুনী ও বাংলাদেশের ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার কোম্পানী জনক রাজ (সবুজ) ‘দুই জাতের(হাইব্রীড) ধানের চারায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি ফুটে তোলেন। তবে চারা লাগানো থেকে কৃষি প্রকৌশলীদের সঙ্গে অংশ নেয় বগুড়ার আজিজুল হক সরকারি কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, সরকারি শাহ সুলতানসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ১০০ শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্যরা। আড়াই ফিট দৈর্ঘ্যের প্রায় ১ হাজার ২’শ খুঁটি পুঁতে প্রতিকৃতির লে-আউট করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন যুক্ত ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক। তবে এ প্রকল্পের জমির ধানকাটার পর সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়া হবে। এর কিছু অংশ স্থানীয় কৃষক এবং এ প্রকল্প কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদেরও দেয়া হবে বলে জানান আয়োজকরা।
এমকে