কানু সান্যাল, পাবনা
মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে বার বার ধরণা দিয়েছেন গ্রামবাসী। কিন্তু কাজ হয়নি, শেষে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে চাঁদা তুলে শুরু করেছেন সেই রাস্তা নির্মাণের কাজ। রাস্তাটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে কোটি টাকা। ঘটনাটি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ানে গ্রামের। ১০ হাজার মানুষের হাড়ি-চাঁদার টাকায় তৈরি হওয়া দৃষ্টান্তের এ রাস্তাটির গল্প এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে।
স্থানীয়রা জানান, গুমানি নদী হইতে স্থানীয় বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন খানের বাড়ি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার জোলা ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করছেন গ্রামবাসী। বেতুয়ান গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ জোলা অনেক দিন আগেই তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। জোলার কারণে ধান, চাল, সরিষাসহ বিভিন্ন কৃষিপন্য নিতে হয় মাথায় করে। পানি আসা-যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ জোলা এখন বেতুয়ান গ্রামের ১০ হাজার মানুষের অভিশাপ। এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেই এ উদ্যোগ নেয় গ্রামবাসী। বৈঠক করে সর্বসম্মতিক্রমে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নির্ধারণ করে নিজেদের মধ্যে। এভাবে প্রায় ১ কোটি টাকা হাড়ি-চাঁদা তুলে গত বছরে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন তারা। ডেজার মেশিন দিয়ে বালু ফেলে নির্মাণ হচ্ছে এ সড়ক। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে বালু ফেললে রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন এলাকাবাসী।
গ্রামটির বাসিন্দা ৭০ বছরের ময়নাল প্রামানিক বলেন, পানি ও বাড়ির উপর দিয়ে চলাচল করতে করতে জীবনটা কেটে গেল, কিন্তু আমাদের ভোগান্তি শেষ হলো না। তবে রাস্তাটা হলে মরেও শান্তি পেতাম। দিলপাশার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রিপন সরকার জানান, গ্রাম থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা এটা। জোলার কারণে বাড়ির উপর দিয়ে ধান-চালসহ বিভিন্ন কৃষিপন্য ও মালামাল পরিবহনে আমাদের অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ছেলে-মেয়েরা বর্ষা মৌসুমে হাটু পানি ভেঙ্গে এক কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করে। কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিছুদিন আগে আমার মায়ের লাশ নিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী মিলে টাকা তুলে নিজেরা শ্রম দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছি।
এমকে