৫০ বছর ধরে বেদখল বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের জমি

৩০ এপ্রিল ২০২১

আশিস রহমান, সুনামগঞ্জ
‘জন্মগত ভূমিহীন একজন ছিল / পতিত বন্দোবস্তের জন্য দরখাস্ত দিল / তিন একর পাওয়ার জন্য দরখাস্ত ছিল/দুই একর এগার শতক দেওয়া তারে হলো / আইনমতে দশ কিস্তিতে সালামী দিয়েছে / এ পর্যন্ত এই জমির খাজনা দিতেছে / কাগজপত্রে বন্দোবস্ত পেয়েছে তো বটে / আজো বেদখল আছে জোতদারের দাপটে / সময় গেল টাকা পয়সা গেল যে বিস্তর/আশাতে আছে প্রায় একত্রিশ বৎসর /শক্তি সম্পদ না থাকাতে সবুর করে আছে/ ভুলিতে পারিবে কি যতদিন বাঁচে..’ দখলদারদের কাছ থেকে নিজের জমি উদ্ধার করতে না পেরে এভাবেই নিজের লেখা গানে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন বাউল শাহ আব্দুল করিম। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ‘ভাটির চিঠি’ নামক গানের বইয়ে তার এ গান স্থান পেয়েছে। গানের কলিতে ৩১ বছর উল্লেখ থাকলেও এতোদিনে ৫০ বছরে গড়িয়েছে। কিন্তু এখনও দখলে যেতে পারেনি বাউল সম্রাটের পরিবার। জমি দখলে বাধা দিয়েছেন প্রভাবশালী একটি পরিবার।


সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে বসবাস করতেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল শাহ আব্দুল করিম। তার জমি দখল করে রেখেছেন এলাকার প্রভাবশালী জোতদাররা। দখলদারদের সাথে পেরে উঠতে না পেরে অনেক দুঃখ ও বেদনা নিয়ে ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করছেন তিনি। প্রভাবশালী পরিবারটির বসবাস তাড়ল গ্রামে।  


বাউল শাহ আব্দুল করিমের সন্তান শাহ নূর জালাল জানান, ‘আমার বাবার নামে রেকর্ডীয় জমি, দলিলপত্রও আছে। আমরা জমির খাজনা প্রদান করে আসছি। কিন্তু জমির ভোগদখল করতে পারছি না। আমার বাবা জীবিত থাকাবস্থায়ও অনেক চেষ্টা করেছেন, প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন- প্রশাসনকে জানিয়েছি, যদি প্রশাসন যাচাই করে আমাদের জমির বৈধতা পায়, তাহলে ভোগদখল করার সুযোগ করে দেওয়া হোক এটাই আমার দাবি।’


বাউল শাহ আব্দুল করিমের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ভূমির দখল প্রসঙ্গে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি প্রতিবেদন দেয় ধল ইউনিয়ন ভূমি অফিস। প্রতিবেদনে বলা হয়, দিরাই উপজেলার ১৩৪ নং জে.এলস্থিত জালালপুর মৌজার ০১ নং সরকারি খাস খতিয়ানের ১৮৯ নং এস.এ দাগে ও ২৫৩ নং আর.এস দাগে ১৭.৫০ একর পতিত খাস জমি রয়েছে। এখান থেকে ২.১১ একর ভূমি জেলা প্রশাসন ভূমিহীন হিসেবে শাহ আব্দুল করিমের নামে ২৫৫/৬৪-৬৫ নং চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়।  বন্দোবস্ত দেয়া জমি ৩৫৯/৮৩-৮৪ নং নামজারি মূলে এস.এ ৭৫ নং খতিয়ানে রেকর্ড হয়।


সরেজমিনে দেখা যায়, জালালপুর মৌজার ১৭.৩৩ একর জমি পতিত পড়ে আছে। এরমধ্যে শাহ আব্দুল করিমের নামে রেকর্ডীয় ২.১১ একর জমি সীমানা পিলার দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। ধলইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারি কর্মকর্তা মোঃ আবুবকর খান জানান, এখানের দুই একর এগারো শতক জমি বর্তমান সেটেলমেন্টেও শাহ আব্দুল করিমের নামে এসেছে। যারা বাধা প্রদান করছে, তাদের কোনো বৈধতা নেই।’


দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন জানান, ‘অনেক আগে জেলা প্রশাসন কর্তৃক বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের নামে এখানে প্রায় দুই একর জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে এটা উনার নামে রেকর্ড হয়েছে। এখন এই জমির মালিক শাহ আব্দুল করিম। আমাদের সার্ভেয়ার জমির দখল শাহ আব্দুল করিমের পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়ে আসছে। কিন্তু তারা দখল হারিয়েছে। দুঃখজনক হয়তো কোনো প্রভাবশালীরা এটা আগে থেকেই দখল করে রেখেছিল, এখন হয়তোবা আবার দখল করে নিয়েছে। শাহ আব্দুল করিমের পরিবারকে তাদের জমির দখলদারিত্ব ফিরিয়ে দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’


এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর