বেড়েছে শিশুশ্রমও

পটুয়াখালীতে বিদেশ ফেরতরাই বেশিরভাগ বাল্যবিয়ের বর

০৭ মে ২০২১

পটুয়াখালী সংবাদদাতা
করোনাকালে পটুয়াখালীতে বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবিকা কমে যাওয়ায় পরিবারের উপর নির্ভরতা কমাতেই এ বিয়ের ঘটনা বাড়ছে। আর বেশিরভাগ বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে চরাঞ্চলে, বর বেশিরভাগই বিদেশ ফেরত ব্যক্তি। স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের আর্থিক সহায়তায় শিশুরা নেমে পড়ছে শ্রম বিক্রি করতে।

গত ২ মাসে জেলায় বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির কথা জানিয়ে পটুয়াখালী টিআইবি জেলা শাখার এরিয়া ম্যানেজার ওবায়দুর রহমান রাজিব জানিয়েছেন, তাদের গবেষণায় জানা যায়- ৯০ শতাংশ বাল্যবিয়ে হয়েছে চরাঞ্চলে। করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া পিতা-মাতা মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে অল্প বয়সে তাদের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। লকডাউনে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ১৮ বছরের নিচের এসব মেয়েকে বিয়ে করেছেন।

জেলা মহিলা অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী এবং গলাচিপা উপজেলায় বাল্যবিয়ের প্রবনতা বেশি। কিছুদিন পূর্বে ১১ বছরের একটি শিশুর বিয়ে বন্ধ করেছে প্রশাসন এবং জরিমানা করেছে। কয়েকমাসে অর্ধশতাধিক বাল্যবিয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। গত ১ মাসে জেলায় ১২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগে।

&dquote;&dquote;

এদিকে করোনার বিস্তার রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে সরকার। এ সুযোগে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মধ্যে কেউ বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, কেউ অটোরিকশা চালক, কেউ বিভিন্ন ওয়ার্কশপ এবং মোটরসাইকেল মেরামতকারীর সহযোগি ও কেউ ইট ভাঙাসহ নানা ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়াচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিস এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কমকর্তাদের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, জেলার চরাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইনে পাঠগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে মাত্র ৮ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী। বাকিরা সেই সুযোগ সুবিধা পায়নি। এসব শিশু শিক্ষার্থীর পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় শিশুদের নিয়মিত তিনবেলা আহার জুটছে না।স্কুল বন্ধ থাকায় এবং পরিবারে আয় কমে যাওয়ায় শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে উদ্বেগজনক হারে, জেলায় শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং শিশুশ্রম বন্ধে জেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে সনাকের সাবেক দলনেতা কে.এম. জাহিদ হোসেন বলেন, “পটুয়াখালী জেলায় আগের তুলনায় করোনা সময়ে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। উঠান বৈঠক, শিশুদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা, বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা”।

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, করোনাকালে অভিভাবকের কাজকর্ম না থাকা, স্কুল খোলার নিশ্চয়তা না থাকা এবং অনিরাপত্তাবোধ থেকে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ে। শিশুশ্রম বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে এবং তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


সুনান বিন মাহাবুব/এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর