দীপক সরকার, বগুড়া
বগুড়ার শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলায় প্রথম বারের মতো চাষ হয়েছে হলুদ (গোল্ডেন ক্রাউন) ও কালো জাতের তরমুজ । নতুন জাতের এ তরমুজ চাষে ফসলের মাঠ হয়ে ওঠছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। তাইওয়ানের এ জাতের তরমুজ দেখতে প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছেন নানা পেশা ও বয়সের শ’ শ’ মানুষ।
গায়ের রং হলুদ(গোল্ডেন ক্রাউন) ও কালো জাতের হলেও ভেতরে একদম অন্যসব তরমুজের মতোই লাল এবং সুমিষ্টিয় তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এ তরমুজ ক্রয় করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এ জাতের তরমুজ চাষীদের একজন শেরপুরের বড়াইদহ গ্রামের আব্দুস সালাম, শখ করে আবাদ করে এলাকায় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন পেশায় শিক্ষক আব্দুস সালাম। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় ইউটিউব দেখে মাচায় তরমুজ চাষ পদ্ধতি শিখেছেন বলে দাবী করেন তিনি। অন্যদিকে কৃষি অফিসের নির্দেশনায় আধুনিক প্রযুক্তিতে এ দুটো জাতের তরমুজ উৎপাদন করেছেন শাহজাহানপুর উপজেলার বামুনিয়া গ্রামের কৃষক মোকছেদ, মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষক সালাম ৮৬ শতক জমিতে উন্নত জাতের তৃপ্তি, ব্লাক বেবি ও ব্লাক সুইট জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। চাষ নিয়ে তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে জমিতে জৈবসার অন্যান্য সার প্রয়োগের পর বেড তৈরি করা হয়, পরে পুরো বেড পলিথিন দিয়ে ঢেকে গাছ রোপণ করা হয়। ফল আসার আগ মূহুর্তে বাঁশের মাচায় ওঠিয়ে দেয়া হয় গাছগুলো। এখন মাচায় হলুদ ও গাঢ় সবুজ তরমুজ ঝুলছে। বর্তমানে এ ফলগুলোর বয়স ৫০ দিন। এরই মধ্যে ফলগুলোতে নেটিং ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলগুলো ৬০ দিনের মাথায় প্রায় ৩/৪ কেজি ওজন হলে পরিপক্ক হবে এবং তা বাজারজাত করার উপযোগী হবে। আব্দুস সালাম আরো জানান, ৮৬ শতক জমিতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। তরমুজগুলো ৪৫ থেকে ৫৫টাকা কেজি দরে বাজার মূল্য হলে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে শাহজাহানপুর উপজেলা বামুনিয়া, চাঁদবাড়িয়া এলাকাসহ উপজেলায় প্রায় ২০ বিঘা জমিতে গোল্ডেন ক্রাউন, মধুমিতা (হলুদ) ও ব্লাক কিং চাষ করা হয়েছে। বামুনিয়া চাঁদবাড়িয়া এলাকায় কৃষক মোকছেদ আলী ও মিজানুর রহমান জানান, গণমাধ্যমে সংবাদে আকৃষ্ট হয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো শখ করে তরমুজ আবাদ শুরু করছি। গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বীজ বপন করা হয়। এরপর সঠিক সময়ে সার ব্যবস্থাপনা, মাচা তৈরি, ডগাকর্তন, ডগা মাচায় উঠিয়ে দেয়া ও তরমুজের গায়ে জাল পরিয়ে টানিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা হয়। বীজ বপনের ৭৫ দিনের মাথায় খামারে ঝুলতে থাকে সোনালী রঙের গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ। একই সময়ের মধ্যে ধরেছে ব্লাক বস তরমুজও। একই ধরনের কথা বলেন উপজেলার পালাহার দক্ষিণপাড়া গ্রামে রুহুল আমিন এবং সালেহ আহমেদ নামের দুই যুবক। এই তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তারা।
চলতি বছরের তরমুজ আবাদকারীদের দেখাদিখি আগামী বছরে এ ফল চাষের ব্যাপকতা বাড়বে বলে আশাবাদী দুই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা। শাহজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানান, গোল্ডেন ক্রাউন এবং ব্লাক বস ভ্যারাইটির তরমুজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সুস্বাদু ফল। সাধারণত উঁচু জমি এবং দো-আঁশ মাটি এ তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। আমাদের দেশে দক্ষিণাঞ্চলে এ তরমুজের চাষ শুরু হয়েছে। বীজ বপনের ৪০ দিনের মাথায় ফুল আসে। আর ফুল থেকে পরিপুষ্ট তরমুজ হতে সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন। গাছের গোড়ায় পানি জমলে গাছে পচন ধরতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি একটু উঁচু জমিতে তরমুজ চাষের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চাষিদের। ব্লাক কিং ও গোল্ডেন (সোনালী) তরমজু নতুন জাতের বলে কিছু কিছু চাষ হয়েছে। বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হলে এ তরমুজের ব্যাপকতাও বাড়বে।
শেরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, উপজেলায় এবার নতুন ফসল হিসেবে ২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। কিন্তু হলুদ(সোনালী) জাতের তরমুজ এ প্রথম চাষ শুরু করেন আব্দুস সালাম। তবে আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। আশা করছি, আগামী বছর এ জাতের তরমুজ চাষ আরো বাড়বে এবং কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।
এমকে