স্বামীর পরকীয়া জানাটাই কাল হয়েছিল এসপিপত্নী মিতুর

১২ মে ২০২১

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের পরকীয়া জেনে ফেলাই নিজের জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার স্ত্রী মিতুর। আর এ কারণে বাবুল আক্তারের ভাড়া করা কিলারের হাতে তাকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে। স্ত্রীকে হত্যার মাধ্যমে পরকীয়ার পথের কাঁটা দুর করেছিলেন বাবুল আক্তার। চট্রগ্রামের চাঞ্চল্যকর এসপিপত্নী মিতু হত্যাকাণ্ডের কারন সম্পর্কে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পিবিআই। দীর্ঘ ৫ বছর পর মিতু হত্যা মামলার জট খুলতে পেরেছে পিবিআই, নিজেই বাদি হয়ে মামলাটি করেছিল তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে কর্মরত উন্নয়নকর্মী গায়েত্রী সিংয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তৎকালীন কক্সবাজার জেলা সহকারি পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বাবুল আক্তার যখন কর্মরত ছিলেন, তখনই গায়েত্রী সিংয়ের সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘদিন তাদের দুজনের চলা ফেরা, কথা বার্তা, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা চালাচালি হয়। তাদের এ ধরনের ক্ষুদে বার্তা সবই ডায়রীতে লিপিবদ্ধ করে রাখতো গায়েত্রী সিং। পরবর্তীতে গায়েত্রী সিং তার প্রকাশিত বইতেও এগুলো উল্লেখ করেছেন। বইতে গায়েত্রী সিং লিখেছেন, ‘Hope the memory of me offering you this personal gift, shall eternalize our wonderful bond, love you, Gaitree’ এর প্রতি উত্তরে এই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা ২৭৬ এর পরের পাতায় বাবুল আক্তার নিজের হাতে ইংরেজিতে গায়েত্রীকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছেন, ‘First meet: 11 Sept, 2013, First PR in Cox. 07 Oct 2013. G Birth Day, 10 October, First Kissed 05 Oct 2013; First beach walk: 8th Oct, 2013, 11 Oct 2013, Marmaid with family, 12 Oct 013, Temple Ramu Prayed Together, 13 Oct 2013; Ramu Rubber Garden Chakaria night beach walk.

বাবুল আক্তার ও গায়েত্রী সিংয়ের এ সম্পর্কের বিষয়টি পরে মিতু জানতে পারে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়ার পাশাপাশি সালিশও হয়। দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পরবর্তীতে বাবুল আক্তার মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তার নিকটাত্মীয় সাইফুল ও মুছাকে কাজে লাগায়, তার স্ত্রী জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে প্রপাগাণ্ড চালানো হয়। সম্প্রতি মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্যগুলো জানিয়েন সাইফুল। মূলতঃ এরপরই খুনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বাবুল আক্তারের নাম উঠে আসে। কেননা এর আগে কিলিং মিশনের দলনেতা হিসেবে মুছার নাম অন্য খুনিদের জবানবন্দিতে উঠে এলেও কার নির্দেশে বা কে মাস্টার মাইন্ড তা স্পষ্ট ছিল না।

বিষয়টি পরিস্কার হওয়ার পরই পিবিআই মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততা মেলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার (১২ এপ্রিল) মিতুর বাবা বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে তার অপর সাত সহযোগির নামে মামলা করেন পাঁচলাইশ থানায়। একই সময়ে বাবুলের করা মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয় পিবিআই।

 

এদিকে মামলা করার পর পাঁচলাইশ থানায় সাংবাদিকদেরকে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বাবুল আকতারের সঙ্গে এক এনজিও কর্মীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তার মেয়ের সঙ্গে বাবুলের ঝগড়া হয়। মৃত্যুর আগে মিতু বিষয়টি তাদের জানিয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তারা বিষয়টি সমাধানেরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। একপর্যায়ে বাবুল ও ওই নারী মিতুকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

দিলীপ কুমার তালুকদার/এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর