চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
নিজের পরকীয়া জেনে যাওয়া ও পথের কাটা দূর করতে নিজের স্ত্রী মিতুকে খুন করাতে ৩ লাখ টাকার কিলিং মিশনে নামে বাবুল আক্তার নিজেই। মিতু হত্যা মামলায় আদালতে দেয়া দুই সাক্ষীর জবানবন্দি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া পিবিআইয়ের দেয়া প্রথম মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও নতুন করা মামলায় লেনদেনের এ বিষয়টি উল্লেখ আছে। নতুন মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বাবুল আক্তারকে, বাদি হয়েছেন মিতুর বাবা। প্রথম মামলার বাদি ছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই। পাঁচ বছর আগে মিতুকে হত্যা করা হয়। চট্রগ্রাম মহানগরীর এ ঘটনায় দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। মাহমুদা খানম মিতু ছিলেন তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী।
মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, স্ত্রী হত্যার তিন দিন পর বাবুল আক্তার তার ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হককে বলেন- তার লাভের অংশ থেকে তাকে যেন তিন লাখ টাকা দেয়া হয়। সাইফুল বিকাশের মাধ্যমে ওই টাকা গাজী আল মামুনকে পাঠান। গাজী আল মামুন ওই টাকা মুসা, ওয়াসিমসহ আসামিদের ভাগ করে দেন। তবে কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, মিতু হত্যা মামলার ভিডিও ফুটেজে বাবুল আক্তারের সোর্স এহতেশামুল হক ভোলা, কামরুল শিকদার ওরফে মূসা ছিলেন। কিন্তু ঘটনার পরপর বাবুল আক্তার দাবি করেছিলেন- হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত। তার সোর্সকে তিনি চিনলেও বিষয়টি চেপে যান বাবুল। ভুলেও তিনি সাইফুল হকের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া মুসা ও ওয়াসিমসহ আসামিদের তিন লাখ টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেননি।
এদিকে গত মঙ্গলবার বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ও মামুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দীনের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। সেখানে দুজনই বাবুলের নির্দেশে স্ত্রী হত্যায় জড়িতদের টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপরই বুধবার দুপুর পৌনে একটায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় নতুন হত্যা মামলাটি করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আরও ৭ জনকে। এর আগে তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার ডেকে বাবুল আক্তারকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পাঁচ বছর আগের এ হত্যাকাণ্ডে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পাওয়ার কথা বুধবার জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।
দিলীপ কুমার তালুকদার/এমকে