বাস্তাবিয়ত না হলে সরকারের একশ’ বছরের ডেল্টা প্ল্যানে দেশের সামষ্টিক এবং খাতভিত্তিক অর্থনীতি যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়বে।বাড়বে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বেড়ে যেতে পারে জীবনযাত্রার ব্যয়ও। জলবায়ু পরিবর্তনের চরম পর্যায়ে এ সব ক্ষতি ও ব্যয় সমানুপাতিক হারে বাড়বে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দরকার হবে- পানি, পরিবেশ, ভূমি, কৃষি খাতের কৌশল প্রণয়ন এবং যথাযথ বিনিয়োগ, নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের। নেদারল্যান্ডসের আদলে করা শতবর্ষী এ প্ল্যানকে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবেই দেখছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এ প্ল্যানটি বাস্তবায়নে প্রতিবছর প্রয়োজন হবে মোট দেশজ আয়ের প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থের। বর্তমান বিনিয়োগ এবং বিদ্যমান দেশজ আয় ব্যবহার করে পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য প্রাক ব্যায়ের মাত্রা ২০৩০ সাল নাগাদ ২৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, এ প্ল্যানটির ধারণা অনুযায়ী মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থায়ন বেসরকারি খাত থেকে এবং ২ শতাংশ সরকারি খাত থেকে নির্বাহ করতে হবে। সরকারি খাত থেকে পাওয়া ২ শতাংশ থেকে দশমিক ৫ শতাংশ রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয়ের পর অবশিষ্ট দেড় শতাংশ এ প্ল্যানটিতে বিনিয়োগ পরিকল্পনার আওতায় ব্যয় হবে।
শতবর্ষী এ প্ল্যানটির বেশিরভাগ সরকারি অর্থায়ন প্রয়োজন হবে বন্যা থেকে রক্ষা, নদী ভাঙন, নিয়ন্ত্রণ, নদীশাসন, এবং নাব্যতা রক্ষাসহ সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনার মতো কাজের জন্য। এছাড়া বড় নগরগুলোতে পানি সরবরাহ, পয়ঃনিস্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা খাতে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বিনিয়োগ থেকে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকার পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যও বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে।
ব-দ্বীপ বিনিয়োগ পরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প ৬৫টি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা বিষয়ক প্রকল্প ১৫টি । এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পনি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বন্য নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে এ প্ল্যানটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ডেলটা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল।
এমকে