দেশে আইএস আছে-নেই এই বিতর্ক কিছুদিন ধরে চলছে। তবে, এই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে আইএস’র সাথে জেএমবির সম্পৃক্ততা উত্থাপিত হওয়া। আইএসের নিজস্ব সাময়িকী দাবিক-এর সর্বশেষ সংস্করণে ২বিদেশি হত্যাসহ ৪টি ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকার এবং জেএমবির প্রশংসা ও এর প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানকে ‘শহীদ মুজাহিদ’ আখ্যা দেওয়ায় এ সন্দেহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এন এম মুনীরুজ্জামান বলছেন, ' নতুন করে সংগঠন করার জন্য বিদেশি সংস্থাগুলো চেষ্টা করছে। বরং একধরনের ‘মার্জার ও অ্যাকুইজিশন’-এর পন্থায় তারা যাচ্ছে, অর্থাৎ যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কাজ করছিলো, তাদের সাথে নিয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারা নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে এই লেখা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে।' ২০০৭ সালের পর এক সময়ে মনে করা হচ্ছিল নিষিদ্ধ জেএমবি সংগঠনটি দুর্বল হয়ে গেছে এবং এটি আর মাথা তুলতে পারবে না। কিন্তু ৮ বছর শেষে জেএমবির পুনর্জাগরণ ঘটায় তাদের নিয়েই আবার ব্যতিব্যস্ত পুলিশ। কেননা সম্প্রতি জেএমবি তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলামিক স্টেটের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে তারা।
জেএমবির অপতৎপরতা ঠেকানোর কৌশলের ব্যাপারে গবেষক নূর খান লিটন বলেন, 'আমাদের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর দেশে যে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে তার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া প্রয়োজন। যেমন পানি ছাড়া মাছ বাঁচে না, তেমনি জঙ্গিরাও এ ধরনের অস্থিরতা ছাড়া তাদের অবস্থান সংহত করতে পারে না।'
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সরাসরি আইএস নেই। তবে তাদের অনুসারী আছে৷ তারাই এখন নানা হত্যা ও নাশকতা চালিয়ে আইএস-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে৷ আর এই জঙ্গিরা কখনো জেএমবি, কখনো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম অথবা অন্যকোন নামে কাজ করছে৷ তারা চায় আইএস-এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে৷’
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ইস্যুটিতে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ বলছেন, দেশে নতুন মাত্রায় গুপ্ত হামলা বা নাশকতা জেএমবির একটা অংশ আইএসের হয়ে শুরু করেছে। জঙ্গি সংগঠনের উপস্থিতি এদেশে নতুন নয়। ১৯৯৬ সাল থেকেই পাকিস্তান ভিত্তিক হরকাতুল জেহাদ বাংলাদেশে উপস্থিত থেকেছে৷ পরে লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যরা বাংলাদেশে উপস্থিত থেকেছে৷ ভারতের আদালতে বিচারাধীন সন্ত্রাসী বলে পরিচিত আবদুল করিম টুন্ডা দীর্ঘদিন বাংলাদেশে উপস্থিত থেকেই ভারতে তাঁর কার্যক্রম চালিয়েছে৷ তাই দেশে আইএস আছে-নেই বিতর্ক না করে এই ধরণের সংগঠনের আবেদন তৈরির অনুকূল পরিবেশ দেশে আছে কিনা এবং থাকলে তা অপসারণে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা ভাবা দরকার। কেননা সহিংস উগ্রপন্থা বা জঙ্গিবাদ আবেদন সৃষ্টি করে যখন মানুষ সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্নতা বা প্রান্তিকতা অনুভব করেন; রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, বিরাজমান সমাজ ও রাজনীতির কাঠামো কিছুই দিতে পারছে না বলে মনে করেন।