বিধ্বংসী রূপে আছড়ে না পড়লেও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘অত্যন্ত প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’এর প্রভাবে দেশের ৯ জেলার ২৭ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে ও বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে ৬ জনের প্রাণহানি হওয়া খবর পাওয়া গেছে।সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খুলনার কয়রা ও বাগেরহাটের মোংলা। ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ইয়াস মূলতঃ তাণ্ডব চালিয়েছে ভারতের ওড়িষ্যা উপকূলে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে এটি রাজ্যটির ধরমা উপকূলে আংশিক আঘাত হানে। পরে উপকূল ধরে আরও উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশে ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে যায়, এতে খুলনা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কোথাও কোথাও বাঁধ উপচে আবার কোথাও বাঁধ ভেঙে বা ফাটল দিয়ে হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে জোয়ারের পানি। এতে শত শত গ্রাম তলিয়ে যায়, ভেসে গেছে কয়েক হাজার ঘেরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। নষ্ট হয়েছে উঠতি ফসল। দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ২৪টি নদীর পানি বিপদসীমার উপরে চলে গেছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখাকালে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
প্লাবিত বিভিন্ন অঞ্চল কত ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে, সেই তথ্য জানা না গেলেও স্থানীয়দের অভিমত, আম্পানের চেয়েও এক ফুট বেশি উচ্চতার প্লাবন ছিল সুন্দরবনে। যদিও আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিল, ৩-৬ ফুট উঁচু জোয়ারে ভাসতে পারে উপকূলীয় ১৪ জেলার নিম্নাঞ্চল।
এদিকে ইয়াসের প্রভাবে শুরু হওয়া দমকা ও ঝোড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে আম-লিচুসহ মৌসুমী ফল ঝরে পড়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ইয়াস বাংলাদেশে আঘাত করেনি, ভারতের ওড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণরূপে এর প্রভাবমুক্ত। তবে পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি বেশি ছিল।
ডা. এনামুর রহমান আরো বলেন, অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোড়লগঞ্জ, মঠবাড়িয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর। ভোলার লালমোহনে গাছচাপায় একজন মারা গেছেন। উপকূলীয় ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ২৭ উপজেলায় মানবিক সহায়তা দিতে ১৬ হাজার ৫০০ শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা দিতে জেলা প্রশাসকদের অনকূলে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া আছে।
এনামুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আওতায় ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আনসার ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। ইয়াস আঘাত হানলে মানুষকে আনার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত ছিল। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতি ছিল।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রস্তুত হয়েছে। মাঠের কাজ শেষ হলে অল্প সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতির হিসাব করা যাবে।
এমকে