মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
কুষ্টিয়ায় ৫ বছরের শিশুসহ মা এবং বিকাশকর্মী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় পিস্তলসহ আটক এএসআইকে বরখাস্ত করা হয়েছে, সেই সঙ্গে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে নিহত তিনজনের মরদেহ তাদের গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
রোববার সকালে কুষ্টিয়া শহরে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার তিনজন হচ্ছে- আসমা খাতুন, তার শিশু সন্তান রবিন ও শাকিল খান। আসমা আটক এএসআইয়ের স্ত্রী। শাকিল খান বিকাশকর্মী ছিলেন।
পরকীয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোববার রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি সাব্বিরুল আলম। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে আটক এএসআই সৌমেন রায়কে। ঘটনার পর সৌমেন রায়কে পিস্তলসহ আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয়রা। সম্প্রতি সৌমেনকে কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় বদলি করা হয়। ঘটনার আগে সেখান থেকে কুষ্টিয়ায় আসেন তিনি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, শাকিল খানের বাবা মেজবার রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছেন সদর থানার ওসি (তদন্ত) নিশি কান্ত। রোববার (১৩ জুন) বিকেলে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে খুলনা রেঞ্জ থেকে, কমিটিতে খুলনা জেলার দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়ার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে; প্রধান করা হয়েছে খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) তানভীর আহমেদকে। বাকি দু’জন হলেন - অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) মো. খায়রুল আলম ও জেলা বিশেষ শাখার ডিআইও-১ শেখ মাসুদুর রহমান। সাত কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে এ কমিটি।
অন্যদিকে দাফনের আগে নিহতদের ময়নাতদন্ত হয়েছে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের আরএমও তাপস কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তাদের মরদেহ রোববার রাত ১২টার পর স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, বাদ আসর আসমা খাতুন ও তার ছেলের দাফন নিজ গ্রাম কুমারখালীর নাতুড়িয়া কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে। শাকিল খানকে তার নিজ গ্রাম একই উপজেলার সাঁওতা কারিগর পাড়া গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার দুপুরে সৌমেন রায়কে বিচারক মো. রেজাউল করিমের আদালতে হাজির করা হয়। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফরহাদ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আদালতে হাজির করার আগে তাকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের ডিবি কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান বলেন, এএসআই সৌমেন রায় ছুটি না নিয়ে ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ঘটনার পর জানতে পারি তিনি কুষ্টিয়ায়। তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
নিহত আসমার মা হাসিনা বেগম জানায়, সৌমেন হিন্দু পরিচয় গোপন করে মোঃ সুমন হোসেন নাম দিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করেন। মেয়ের অন্যায় হলে আইনের আওতায় বিচার না করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এটার সুষ্ঠ বিচার চাই। বিকাশ কর্মী শাকিলের পরিবারের দাবি পরকিয়ার অভিযোগ মিথ্যা, মূলতঃ বিকাশে টাকা লেনদেন নিয়ে সমস্যা থাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, আসমার দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান ছিল রবিন। ডিভোর্সের পর সৌমেনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ও বিয়ে করেন। কিন্তু সৌমেন অনত্র্য বদলি হওয়ার পর শাকিলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান।
এমকে